কথার লড়াই ভুলে কাজী সালাউদ্দিনের বাসায় ক্রীড়ামন্ত্রী পাপন

৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

কথার লড়াই ভুলে কাজী সালাউদ্দিনের বাসায় ক্রীড়ামন্ত্রী পাপন

বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন এবং ক্রীড়ামন্ত্রী তথা বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের মাঝে কথার লড়াইয়ের কথা কারও অজানা নয়। গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফোনের বিষয়ে পাপনকে খোঁচা মেরেছিলেন সালাউদ্দিন। এরপর সালাউদ্দিনকে ধুয়ে দিয়েছিলেন পাপন। সেই পাপন এখন ক্রীড়ামন্ত্রী। ফুটবলসহ দেশের সব খেলার অভিভাবক। তাই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিবাদ ভুলে সালাউদ্দিনের বাসায় উপস্থিত হলেন ক্রীড়ামন্ত্রী পাপন।

বেশ কিছুদিন ধরেই কাজী সালাউদ্দিন অসুস্থ। তার বাইপাস সার্জারি হয়েছে। অস্ত্রোপচারের পর থেকে চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি নিজের বাসাতেই থাকছেন। তাই পাপন মন্ত্রী হওয়ার পর বাফুফের সঙ্গে বসলেও কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি তার। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সালাউদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে তার বারিধারার বাসায় যান পাপন। প্রায় ২০ মিনিটের মতো তিনি সালাউদ্দিনের সঙ্গে আলোচনা করেন। তার স্বাস্থ্যের খোঁজ খবর নেন।

সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের পাপন বলেন, ওনার যখন সার্জারিটা হয়, তখন তো নির্বাচনে (জাতীয়) শেষ মুহূর্ত। আমি তখন এলাকায় ছিলাম। তখন থেকেই ওনার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। ঢাকায় এসেই ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে কথা হয়েছে।  তাঁকে দেখতে যেতে চাই, কী অবস্থা আমাকে জানাতে বলি। ওনারা বলেন, জানাবেন। আমি আবার বাইরে চলে গেলাম এসিসির এজিএমের জন্য। আসার পর বললেন যেকোনো সময় আসতে পারেন। পরশু দিন বলল, আমি আজ চলে এলাম দেখতে।

কাজী সালাউদ্দিনের শারিরীক অবস্থা সম্পর্কে ক্রীড়ামন্ত্রী বলেন, দেখে মনে হলো আল্লাহর রহমতে উনি খুব ভালো আছেন এখন। অনেক সুস্থ। হাঁটাচলা করছেন স্বাচ্ছন্দ্যে, সেটা দেখে ভালো লেগেছে। সার্জারির পর পুনর্বাসন দরকার আছে। আরও কিছুদিন সেটা করতে হবে।

ফুটবল নিয়ে কথা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে আমি আগেই বসেছি। তখনই ওনাদের মূল ইস্যুগুলো শুনেছি। আজকে উনি (কাজী সালাউদ্দিন) কয়েকটি সমস্যার কথা বলেছেন। আমি বলেছি, ঠিক আছে আপনি একেবারে সুস্থ হয়ে আসেন। এর মধ্যে কিছু কাগজপত্র পাঠাতে বলেছি, আমি দেখব। একটা হচ্ছে, খেলার মাঠ নেই। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম লম্বা সময় ধরে বন্ধ হয়ে আছে, ওনাদের খেলার কোনো জায়গা নেই। এটা বড় সমস্যা। পরশু বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম দেখতে যাচ্ছি আমি। কীভাবে তাড়াতাড়ি শেষ করা যায়, আপ্রাণ চেষ্টা করব। খেলার কোনো জায়গা বের করতে পারি কি না, দেখব।

এদিন কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে সম্পর্কের বৈরিতা নিয়েও কথা বলতে হয়েছে ক্রীড়ামন্ত্রীকে। দুজনের সম্পর্ক ঠিকঠাক হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নে পাপনের উত্তর, এত বছরের সম্পর্ক এক দিনের কথায় তো আর শেষ হয়ে যায় না। ছোটবেলা থেকে মাঠে যেতামই ওনার খেলা দেখতে। এটা তো অস্বীকার করার পথ নেই। ওনার মতো কিংবদন্তি ফুটবলার বাংলাদেশে আর নেই। অনেক সময় অনেক কথায় উনি আহত হতে পারেন, আমিও পারি। সেটা ওখানেই শেষ।

উল্লেখ্য, গত বছরের মার্চে টাকার অভাবে নারী ফুটবল দলকে অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে সংবাদ সম্মেলনে পাপনকে খোঁচা দিয়ে কাজী সালাউদ্দিন বলেছিলেন, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) ফুটবলেরও প্রিয়। সবার ব্যক্তিত্ব তো এক নয়। আমি তো লোক দেখিয়ে বলব না, প্রধানমন্ত্রী ফোন দিয়েছে। আমি ফুটবল ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছি। স্বাধীনতা থেকে আজ পর্যন্ত। আমি ওই নাটক করতে পারব না।

এর জবাবে মিরপুর শের-ই-বাংলায় সংবাদ সম্মেলনে কাজী সালাউদ্দিনকে ধুয়ে দিয়েছিলেন পাপন, যে যত কথাই বলুক, এসব নিয়ে আমি মন খারাপ করি না। তবে আমার কাছে সবচেয়ে খারাপ লাগছে মেয়েরা (অলিম্পিক বাছাই) যেতে পারল না! তাও মাত্র ২০ লাখ টাকার জন্য! এর চেয়ে দুঃখ, কষ্ট মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কী কষ্টটাই না পেয়েছেন! আমাদের ক্রিকেট বোর্ডে, ফুটবল বোর্ডে যেসব পরিচালকেরা আছে, তারা ২০ লাখ টাকা দিতে পারবে না! তাদের অনেকের দৈনিক খরচই তো ২০ লাখ টাকা। আমাদের কোনো ক্রিকেটারকে বললেই তো দিয়ে দিত!

সেদিন পাপন আরও বলেছিলেন, "মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ফোন করলে আমি যেখানেই থাকি, যে অবস্থায় থাকি, ফোন ধরবই। আমি জানি না, এটা নিয়ে কেন বলেছে। আমি বলছি এ কারণে এটার সঙ্গে ওটার কী সম্পর্ক আমি জানি না। আমার মনে হয় সমস্যাটা আপনাদের, আপনারা এত বাজে প্রশ্ন করলেন কেন। আপনারা (সাংবাদিকরা) হিসাব চাচ্ছেন, টাকা কী করেছেন? এমন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে যান কেন? এটা করলে তো উনার মাথা খারাপ হবে, এটা সবাই জানেন। এমন প্রশ্ন করেন কেন? করলে মাথা ঠিক থাকবে?

মন্তব্য করুন: