মেসি-নেইমার-এমবাপ্পে পারেনি, তারুণ্যে ভর করে পিএসজির স্বপ্নপূরণ
১ জুন ২০২৫

তারকায় পূর্ণ দল নিয়ে এতদিন পিএসজি যা করতে পারেনি, এবার তরুণ এক দল নিয়ে তাই করে দেখিয়েছেন লুইস এনরিকে। দলে নেই কোনো বড় তারকা। আসরের শুরুটাও তাদের হয়নি ভালো। একটা সময় প্রথম পর্ব থেকেই বাদ পড়ার শঙ্কায় ছিল তারা। সেখান থেকে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ইতিহাস গড়ে নিজেদের প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জিতেছে ফরাসি ক্লাবটি।
শনিবার রাতে মিউনিখ অনুষ্ঠিত ফাইনালে ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে শিরোপা জেতে পিএসজি। চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড।
এবারের আসরের নকআউট পর্বে আসা দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কনিষ্ঠ দল নিয়ে শিরোপা জেতেন এনরিকে। দলের খেলোয়াড়দের গড় বয়স ছিল ২৪ বছর ২৬২ দিন।
শিরোপা লড়াইয়ে দলের এই সাফল্যের অন্যতম নায়ক তরুণ তুর্কী দিজিয়ের দুয়ে। ১৯ বছর বয়সী ফরাসি এই ফরোয়ার্ড জোড়া গোলের পাশাপাশি একটি গোলে সহায়তা করেন। পিএসজিকে ফাইনালে তোলার পথে বড় অবদান রাখা উসমান দেম্বেলে গোল না পেলেও দুটি অ্যাসিস্ট করেন। একটি গোল করেন আশরাফ হাকিমি। শেষ দুটি গোল আসে জর্জিয়ার ২৪ বছর বয়সী উইঙ্গার খাভিচা কাভারাৎস্খেলিয়া ও ১৯ বছর বয়সী ফরাসি মিডফিল্ডার সেনির পা থেকে।
২০১১ সালে কাতার স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্টস পিএসজির মালিকানা কেনার পর চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের জন্য কোটি কোটি ইউরো খরচ করে নামিদামি তারকাদের দলে ভিড়িয়েছিল। ডেভিড বেকহ্যাম, জানলুইজি বুফফন, জ্বলাতান ইব্রাহিমোভিচ, আনহেল ডি মারিয়ার মতো তারকারা খেলেছিলেন দলটির হয়ে। ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ইউরোপ ক্লাব সেরার দুটি আসরে দলের হয়ে একসঙ্গে খেলেছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে, নেইমার, লিওনেল মেসি ও সের্হিও রামোসের মতো তারকারা। কিন্তু সেই দুই মৌসুমে শেষ ষোলোও পার করতে পারেনি দলটি।
ছয় বছর প্যারিসের ক্লাবটিতে কাটানোর পর চলতি মৌসুমের শুরুতে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন দলের সবচেয়ে বড় তারকা এমবাপ্পে। এর মাধ্যমে ক্লাবটি হয়ে পড়ে এক কথায় তারকা শূন্য। ফরাসি অধিনায়কের বিদায়ের আগেই অবশ্য এনরিকে দাবি করেছিলেন, তাকে ছাড়াই ভালো থাকবে পিএসজি। সে সময় কোচের এই বক্তব্যকে অনেকেই ভালোভাবে নেননি।
এবারের মৌসুম থেকে নতুন ফরম্যাটে মাঠে গড়ানো চ্যাম্পিয়নস লিগে হতাশাজনক শুরুর পর সমালোচনা যেন আরো চেপে ধরেছিল পিএসজি কোচকে। ২০২৩ সালে দলটির দায়িত্ব নেওয়া এনরিকের অধীনে প্রথম পাঁচ ম্যাচে মাত্র একটিতে জয় পায় তারা। নভেম্বরে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে হারের পর ৩৬ দলের টুর্নামেন্টে পয়েন্ট তালিকার ২৬ নম্বরে নেমে যায় দলটি।
তবে হতাশাজনক মৌসুমে পিএসজির জন্য টার্নিং পয়েন্ট হয়ে আসে জানুয়ারিতে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে দুর্দান্ত জয়টি। ঘরের মাঠে ইংলিশ ক্লাবটির বিপক্ষে ২-০ গোলে পিছিয়ে থাকা এনরিকের দল দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচ জেতে ৪-২ ব্যবধানে। শেষ পর্যন্ত পয়েন্ট তালিকার ১৫ নম্বরে থেকে লিগ পর্ব শেষ করে তারা।
নকআউট পর্বে স্বদেশি ক্লাব ব্রেস্তোয়াকে দুই লেগ মিলিয়ে ১০-০ গোলে বিধ্বস্ত করে শেষ ষোলোয় উঠে পিএসজি। শেষ ষোলো, কোয়ার্টার-ফাইনাল ও সেমি-ফাইনালে প্রিমিয়ার লিগের তিনটি ক্লাবকে বিদায় করে ফাইনালে পা রাখে তারা, যার শুরুটা হয় লিভারপুলকে দিয়ে। এই ধাপগুলোয় দলের হয়ে বড় অবদান রাখেন গোলরক্ষক জানলুইজি দেন্নারুম্মা।
পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থেকে লিগ পর্ব শেষ করা লিভারপুলের বিপক্ষে কোয়ার্টার-ফাইনালে ওঠার দুই লেগের লড়াইটি শেষ হয়েছিল ১-১ সমতায়। টাইব্রেকারে ৪-১ গোলের জয়ে পরের ধাপে যায় পিএসজি। শেষ আটের লড়াইয়ে দুই লেগ মিলিয়ে অ্যাস্টন ভিলাকে ৫-৪ গোলে হারায় এনরিকের দল। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে তাদের সামনে তেমন কিছুই করতে পারেনি রিয়ালকে বিদায় করে সেমি-ফাইনালে আসা আর্সেনাল। দুই লেগ মিলিয়ে তাদেরকে ৩-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা লড়াইয়ের মঞ্চে ওঠে ফরাসি চ্যাম্পিয়নরা।
প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের পাশাপাশি প্রথমবারের মতো ট্রেবলও জিতেছে পিএসজি। দলের দুর্দান্ত এই সাফল্যে বড় অবদান রাখা দেম্বেলেকে ধরা হচ্ছে এবারের ব্যালন ডি’অর জয়ের অন্যতম দাবিদার হিসেবে। ক্যারিয়ারের সেরা মৌসুম কাটানো ফরাসি এই ফরোয়ার্ড সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে করেছেন ৩২ গোল। অথচ গত মৌসুমে দলের হয়ে ২৬ ম্যাচে মাত্র ৩ গোল করেছিলেন তিনি।
দেম্বেলের এই পরিবর্তনটাও এমনি এমনি আসেনি। এর পেছনেও আছে এনরিকের অবদান। গত অক্টোবরে চ্যাম্পিয়নস লিগে আর্সেনালের বিপক্ষে লিগ পর্বের ম্যাচের আগে অনুশীলনে দেরি করে আসায় দেম্বেলেকে ম্যাচের স্কোয়াড থেকে বাদ দিয়েছিলেন কোচ। ম্যাচটি ২-০ গোলে হেরেছিল পিএসজি।
দেম্বেলেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটিকে পরবর্তীতে মৌসুমের সেরা সিদ্ধান্ত হিসেবে আখ্যা দেন এনরিকে। এরপরই দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজের প্রতিভার জানান দেন ২৮ বছর বয়সী দেম্বেলে।
মন্তব্য করুন: