বাংলাদেশের হয়ে সাকিবকে খেলতে দেবেন না উপদেষ্টা আসিফ
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ফিরতে পারেননি সাকিব আল হাসান। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঘরের মাঠে টেস্ট খেলে এই ফরম্যাটকে বিদায় জানানোর কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। এবার যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এক বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশের হয়ে সাকিবকে আর খেলতে দেওয়া হবে না।
সাকিবের জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামার বিষয় নিয়ে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত তার এক ফেইসবুক পোস্টকে ঘিরে। এরপর ফেইসবুকে পরোক্ষভাবে বাঁহাতি এই অলরাউন্ডারের সঙ্গে আসিফের চলেছে পাল্টাপাল্টি লড়াই। এর মধ্যেই নিজের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানালেন ক্রীড়া উপদেষ্টা।
সোমবার চ্যানেল টুয়েন্টিফোরকে ফোনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আসিফ বলেন, “তাকে (সাকিব) বাংলাদেশের পতাকা বহন করতে দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশের জার্সির পরিচয় বহন করতে দেওয়া, এটা আমার পক্ষে কোনোভাবেই সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব না। ইতিপূর্বে এটা আমি বিসিবিকে না বললেও এখন আমার বোর্ডের প্রতি স্পষ্ট নির্দেশনা থাকবে, সাকিব আল হাসান আর কখনও বাংলাদেশ টিমে খেলতে পারবেন না।”
দেশসেরা ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যায় ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, “যতবার তিনি (সাকিব) দেশে আসার জন্য চেয়েছেন, খেলার জন্য চেয়েছেন, বলেছেন, ‘আমাকে জোর করে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে। আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। আমি শুধু এমপি ইলেকশনটা করেছি এলাকার মানুষের জন্য কাজ করতে চেয়েছি।’ কিন্তু আসল সত্যটা তো হচ্ছে, তিনি আসলে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠেভাবে জড়িত, যার প্রমাণ আমরা পেলাম।”
প্রমাণ বলতে এখানে আসিফ সাকিবের গত রোববার রাতের এক পোস্টের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, যেখান থেকে সব বিতর্কের শুরু। নিজের অফিশিয়াল ফেইসবুক পেইজ থেকে দেশের পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে এক পোস্ট দেন সাকিব। সেখানে হাসিনার সঙ্গে তার ছবি সংবলিত পোস্টে তিনি লেখেন, “শুভ জন্মদিন আপা।”
সে রাতেই ক্রীড়া উপদেষ্টা তার ব্যক্তিগত ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে সাকিবকে ইঙ্গিত করে দেওয়া একটি স্ট্যাটাসে লেখেন, “একজনকে পুনর্বাসন না করায় সহস্র গালি দিয়েছেন আপনারা আমাকে। বাট আই ওয়াজ রাইট। এন্ড অব দ্য ডিসকাশন।”
এর ঘণ্টা খানেক পর সাকিব নিজের পেইজ থেকে দেওয়া এক পোস্টে লেখেন, “যাক শেষমেশ কেউ একজন স্বীকার করে নিলেন যে তার জন্য আমার আর বাংলাদেশের জার্সি গায়ে দেওয়া হলো না, বাংলাদেশের জন্য খেলতে পারলাম না!”
সোমবার বিকেলে সাকিবকে ইঙ্গিত করে নিজের অ্যাকাউন্টে আরেকটি পোস্টে আসিফ লেখেন, “ভাইয়া, আমাকে জোর করে নমিনেশন দেওয়া হয়েছিল। আমি শুধু নির্বাচনটাই করেছিলাম, আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনীতিতে জড়িত হইনি। ইউ নো হু। যার হাত ছাত্র-জনতার রক্তে রঞ্জিত, তাকে বাংলাদেশের পতাকা বহন করতে দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বোর্ডের কর্তারা একাধিকবার রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করতে বললেও তা না করে বরং খুনিদের এনডোর্স করা ছাড়াও শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারি, মানি লন্ডারিং, ফিন্যান্সিয়াল ফ্রড করা কাউকে কেন শুধু ভালো ক্রিকেটার বলেই পুনর্বাসন করতে হবে? আইন সবার জন্য সমান, ফেস ইট।”
হাসিনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর বিষয়ে ফোনে চ্যানেল টুয়েন্টিফোরকে সাকিব বলেন, “সে (শেখ হাসিনা) তো সব সময় সিরিয়াসলি খেলা ফলো করেছে, খেলা দেখছে। তাই না? খেলার সঙ্গে যুক্ত এবং ওতপ্রোতভাবেই যুক্ত ছিলেন। তো সেখান থেকেই একটা সম্পর্ক হয়েছে। সেটা রাজনীতির আগে থেকেই। সেই জায়গা থেকে আমি একজনকে উইশ করতেই পারি। তা ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্য, কাউকে কোনো ইঙ্গিত, এমন কোনো কিছুই না।”
মন্তব্য করুন: