টেস্ট থেকে টি-টোয়েন্টি

৩১ অক্টোবর ২০২২

টেস্ট থেকে টি-টোয়েন্টি

অ্যাডলফ হিটলার। যুদ্ধবাজ এই রাজনীতিবিদকে নিয়ে ক্রিকেটের একটা গল্প প্রচলিত আছে। জার্মানি থেকে অন্য দেশ সফরে যাবার সময় প্লেনের জানালা দিয়ে লোকজনকে ক্রিকেট খেলতে দেখলেন। ফেরার পথেও একই দৃশ্য। ওই ম্যাচটাই নাকি চলছিল কয়েকদিন ধরে। হিটলার তো রেগে আগুন। একটা খেলা এত দিন চললে মানুষ কাজ করবে কখন? হিটলার তাই ঘোষণা দিলেন, ‘আমার দেশ জার্মানিতে ক্রিকেট নিষিদ্ধ’। ওই দীর্ঘ খেলার ফরম্যাটটা সময়ের পরিক্রমায় কেমন বদলে গেল! টেস্ট থেকে ওয়ানডে হয়ে এল টি-টোয়েন্টি।

প্রথমদিকের ক্রিকেট খেলার প্রতীকী ছবি।  ছবি: সংগৃহিত

ক্রিকেটের শুরু নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। এর শুরু নাকি সেই ত্রয়োদশ শতাব্দীতে। ইংল্যান্ডে। প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে কোন দুই দেশ খেলেছে জানলে আপনি অবাক হবেন। যুক্তরাষ্ট্র আর কানাডা। ১৮৪৪ সালে। তবে এটাকে স্বীকৃতি দিতে আপত্তি অনেকের। আপত্তি নেই প্রথম টেস্ট ম্যাচের স্বীকৃতিতে। ১৮৭৭ সালে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে হয়েছিল সেই প্রথম টেস্ট। 

এ দুটো দেশেই ক্রিকেটচর্চা হচ্ছিল নিয়মিত। ১৮৮৯ সালে তৃতীয় দল হিসেবে টেস্ট আঙ্গিনায় নাম লেখায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর বাড়তে বাড়তে এখন টেস্ট পরিবারে ১২ সদস্য। দশম দেশ হিসেবে ২০০০ সালে যে পরিবারে নাম লেখায় বাংলাদেশ। এই টেস্ট ক্রিকেট এক সময় ছিল ‘টাইমলেস’। অর্থাৎ, যত দিন রেজাল্ট না হবে, তত দিন খেলা। এরপর তা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয় পাঁচ দিনে। কিন্তু আধুনিক কালে মানুষের হাতে এত সময়ও-বা কোথায়? ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা তাই কমতে থাকে ক্রমশ।

ওয়ানডে খেলার প্রতীকী ছবি।  ছবি: সংগৃহিত

এ সময় হুট করে ওয়ানডে ক্রিকেটের জন্ম। ১৯৭১ সালে। অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে বৃষ্টির হানা। দর্শকদের বিনোদন দিতে মেলবোর্ন টেস্টের পঞ্চম দিনে একটি সীমিত ওভারের ম্যাচ আয়োজনের ব্যাপারে সম্মত হয়।

সেই শুরু। টেস্টযুগে ক্রিকেটের মৃতপ্রায় সময়ে তাতে প্রাণসঞ্চার করে ওয়ানডে ফরম্যাট। মেলবোর্নের ওই প্রথম ম্যাচেই গ্যালারিতে ৪৫ হাজার দর্শক। চার বছরের মধ্যেই ১৯৭৫ সালে আয়োজন করা হয় প্রথম বিশ্বকাপের। 

ক্যারি প্যাকার ওয়ানডে ক্রিকেট প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।  ছবি: সংগৃহিত

এই ভদ্রলোককে চেনেন? ক্যারি প্যাকার। ওয়ানডে ক্রিকেটের প্রসারে সবচেয়ে বড় ভূমিকা মূলত তাঁর। প্যাকারের সেই বিখ্যাত ওয়ার্ল্ড সিরিজের। ক্রিকেটে আসে রঙিন পোশাক, সাদা বল। ফ্লাডলাইটের আলোয় হয় ক্রিকেট ম্যাচ। এসব মিলিয়ে আবার ক্রিকেটে ফিরেছে দর্শক।

ওয়ানডে ক্রিকেটে একেক সময়ে ইনিংসের দৈর্ঘ্য ছিল একেক রকম। কখনো ৬০ ওভার, কখনো ৪৫, কখনো ৫০। ১৯৮৭ সাল থেকে এটাকে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে ৫০ ওভারে। তা টেস্ট থেকে তো ওয়ানডে এল। হুট করে। জনপ্রিয়তাও পেল। তুমুলভাবে। এই ওয়ানডে থেকে টি-টোয়েন্টি যুগ শুরু হল কিভাবে?

টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ট্রফি।  ছবি: সংগৃহিত

২০০৩ সালের ১৩ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু টি-টোয়েন্টির। আইসিসি তখনও টি-টোয়েন্টি নিয়ে নিশ্চিত ছিল না। ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি নেয় ‘ধীরে চলো নীতি’। ২০০৪ সালে প্রথমে নারীদের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি। পরের বছর ছেলেদের। অথচ সময়ের ব্যবধানে সেই টি-টোয়েন্টিই এখন কী সিরিয়াস ক্রিকেট! ফ্র্যাঞ্জাইজি ক্রিকেট থেকে এ ফরম্যাটের বিশ্বকাপ, সব জায়গাতেই জমজমাট। তুমুল জনপ্রিয়। এতটাই যে, টি-টোয়েন্টি এখন টেস্ট-ওয়ানডেকে গিয়ে খায় কিনা, সে আশঙ্কাও তো করছেন অনেকে! 

হিটলারের গল্পটা তাই চলে আসে আবারও। তাঁর সময়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থাকলে হয়তো নিজ দেশে ক্রিকেট নিষিদ্ধ করতেন না। বরং হয়তো রাজনীতির মারপ্যাঁচের ফাঁকে একটু রিল্যাক্স করার জন্য ক্রিকেটে আশ্রয় খুঁজতেন। কোনও এক স্টেডিয়ামে গা এলিয়ে হিটলার হয়তো উপভোগ করতেন তিন ঘণ্টার ‘ক্রিকেট শো’। টি-টোয়েন্টি।
 

মন্তব্য করুন: