চলে গেলেন আর্জেন্টিনাকে প্রথম বিশ্বকাপ জেতানো কোচ

চলে গেলেন আর্জেন্টিনাকে প্রথম বিশ্বকাপ জেতানো কোচ

পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন আর্জেন্টিনার প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের নেপথ্য নায়ক সিজার লুইস মেনোত্তি। সোমবার ৮৫ বছর বয়সে এই কিংবদন্তি কোচের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ)।

মারা যাওয়ার আগে রক্তস্বল্পতাসহ নানা শারীরিক জটিলতা নিয়ে মাসখানেক ধরে হাসপাতালে ছিলেন মেনোত্তি। তার চলে যাওয়ার খবর নিশ্চিত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এএফএর পক্ষ হতে বলা হয়, “আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশন অত্যন্ত শোকের সঙ্গে বর্তমান জাতীয় দলের পরিচালক ও আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী কোচ লুইস সিজার মেনোত্তির মৃত্যুর খবর জানাচ্ছে। বিদায় প্রিয় ফ্লাকো!”

মেনোত্তির কোচিংয়ে ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত ১৯৭৮ বিশ্বকাপ জয় করে দীর্ঘদিনের আক্ষেপ ঘোচায় আর্জেন্টিনা। পরের বছর জাপানে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপেও এই কোচের অধীনে শিরোপা জেতে দেশটি। সেই আসরে অসাধারণ পারফর্ম করে বিশ্ব ফুটবলে নিজের আগমনী বার্তা জানান দেন কিংবদন্তি দিয়েগো মারাদোনা। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ও নির্বাচিত হন তিনি।

আরেক আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি লিওনেল মেসির শহর রোসারিওতে ১৯৩৮ সালে মেনোত্তির জন্ম। খেলোয়াড়ি জীবনে ছিলেন স্ট্রাইকার। তবে সেখানে উল্লেখযোগ্য তেমন কিছুই করতে পারেননি। ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে ১১ ম্যাচে মাঠে নেমে ২ গোল করেন। ক্লাব ক্যারিয়ারেও তেমন নিয়মিত হতে পারেননি।

এরপর ১৯৭০ সালে খেলোয়াড়ি জীবন থেকে সরে দাঁড়িয়ে কোচিংয়ে নাম লেখান মেনোত্তি, যা তাকে কিংবদন্তিদের কাতারে নিয়ে যায়। ৩৭ বছরের কোচিং ক্যারিয়ারে ১১টি ক্লাব ও দুটি দেশের জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব পালন করা এই কিংবদন্তি তার ক্যারিয়ার শুরু করেন করেন মেসির শৈশবের ক্লাব নিউয়েলস ওল্ড বয়েজের হয়ে।

১৯৭৪ সালে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের দায়িত্ব পান মেনোত্তি। দীর্ঘদিন ধরে তার হাতে গড়ে ওঠা দলটি ১৯৭৮ বিশ্বকাপের ফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে ৩-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। তার হাত ধরেই ১৯৭৭ সালে আর্জেন্টিনা দলে মাত্র ১৬ বছর বয়সে অভিষেক হয় মারাদোনার। কিন্তু তখন এই কিংবদন্তিকে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপের দলে রাখেননি। তবে পরে এর ব্যাখ্যায় মেনোত্তি জানান, অল্প বয়সী মারাদোনার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখার জন্য তিনি তাকে দলে নেননি। এরপর অবশ্য মারাদোনার নেতৃত্বে ১৯৮৬ সালে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফি ঘরে তোলে আর্জেন্টিনা।

শিরোপা ধরে রাখার অভিযানে পরের আসরেও দলের কোচ ছিলেন তিনি। প্রথম ম্যাচে বেলজিয়ামের কাছে হারলেও পরের দুই ম্যাচে হাঙ্গেরি ও এল সালভাদরকে হারিয়ে গ্রুপপর্ব পার করে আর্জেন্টিনা। কিন্তু পরের রাউন্ডে ব্রাজিল ও ইতালির কাছে হেরে বাদ পড়ে তারা। আর বিশ্বকাপ শেষে মেনোত্তিরও জাতীয় দলের দায়িত্ব শেষ হয়।

দেশকে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জেতানো ছাড়াও আরেকটি কারণে আর্জেন্টিনার ফুটবলে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন মেনোত্তি। তার কোচিংয়েই নিজেদের পরিচিত শারীরিকভাবে আগ্রাসী ও মারদাঙ্গা ফুটবল থেকে নান্দনিক ও আকর্ষণীয় ফুটবল খেলতে শুরু করে আর্জেন্টিনা।

মেনোত্তির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন আর্জেন্টিনার ২০২২ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক মেসি, কোচ লিওনেল স্কালোনি, দেশটির প্রেসিডেন্টসহ আরও অনেক ফুটবল ব্যক্তিত্ব এবং তার সাবেক ক্লাবগুলো।

মন্তব্য করুন: