পার্পল ক্যাপের ৫ ফেভারিট কারা?

১২ এপ্রিল ২০২৩

পার্পল ক্যাপের ৫ ফেভারিট কারা?

ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানদের নিয়ে যতটা মাতামাতি, সাধারণত বোলারদের নিয়ে ততটা না। আইপিএলের অরেঞ্জ ক্যাপের লড়াই যতটা আগ্রহের, পার্পল ক্যাপের যুদ্ধ কি ততটা রোমাঞ্চের?

আইপিএলে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেবেন যিনি, তাঁর মাথায় উঠবে বেগুনি রঙের ক্যাপ। এ মাথা, ও মাথা ঘুরে এবারের টুর্নামেন্ট শেষে তা যাবে কার একক অধিকারে? কোন বোলারের মাথায় সাজবে পার্পল রঙের এই মুকুট?

আইপিএলের শুরুর অংশে সেরা পাঁচ দাবিদার নিয়ে ‘অল আউট স্পোর্টস’-এর এই প্রেডিকশন। এর সঙ্গে মিলিয়ে নিন আপনারটি। 

রশিদ খান-গুজরাট টাইটানস রশিদ খান (গুজরাট টাইটানস)

রশিদ খানকে সময়ের সেরা লেগ স্পিনার বললেও খুব একটা ভুল হবে না। ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকে লেগ স্পিন জাদু দেখিয়ে আসছেন এই আফগান তারকা। 

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে মাত্র ৮০ ম্যাচেই তাঁর ১২৯ উইকেট। এই ফরম্যাটে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের তালিকায় আছেন তৃতীয় স্থানে। শীর্ষস্থানটাও যে এক সময় রশিদের হবে, সেটি নিয়ে সংশয় নেই।

আন্তর্জাতিকের মতো আইপিএল মঞ্চেও এই লেগি দুর্দান্ত। ২০১৭ সালে চার কোটি রুপিতে রশিদকে দলে নেয় সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। ফ্রাঞ্চাইজিটির হয়ে পাঁচ মৌসুমে ৭৬টি ম্যাচে নেন ৯৩টি উইকেট। কত কত ম্যাচ যে জিতিয়েছেন তিনি! 

তবু ২০২২ আসরে সানরাইজার্সের রিটেইন তালিকা থেকে বাদ পড়ের রশিদ। সুযোগটা লুফে নেয় আইপিএলের নতুন দল গুজরাট টাইটানস। রশিদকে কিনে নেয় ১৫ কোটি রুপিতে।

দল বদলালেও এই লেগ স্পিনারের ধার কমেনি। আইপিএলে ছয় মৌসুমের প্রতিটিতে ১৫-এর বেশি করে উইকেট পেলেও এখন পর্যন্ত কোনোবার জেতেননি পার্পল ক্যাপ। 

এবার কি সেই আক্ষেপ ঘুচবে? গুজরাটের হয়ে প্রথম তিন ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়ে পার্পল ক্যাপের দৌড়ে ভালোভাবেই তো আছেন রশিদ খান।মোহাম্মদ সিরাজ-রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুমোহাম্মদ সিরাজ (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু)

কে ভেবেছিলেন, অটোরিকশা চালকের ছেলে একদিন ভারতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন বিশ্বমঞ্চে!

২০১৭ সালে ২.৬ কোটি রুপিতে পেস বোলার মোহাম্মদ সিরাজকে কেনে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। সেবার ৬ ম্যাচ খেলে পান ১০ উইকেট। প্রতিশ্রুতির জানান দেন পারফরম্যান্সে। ধারাবাহিকতায় মাত্র মাস কয়েক পরই ভারতের অভিষেক হয় সিরাজের।

২০১৮ আইপিএলে তাঁকে দলে ভেড়ায় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। এখনও সেখানেই। গত আসর খুব একটা ভালো যায়নি। ১৫ ম্যাচে পান মাত্র ৯ উইকেট। ইকোনমিও ছিল ১০-এর উপরে।

এবার কি সিরাজ ফিরতে পারবেন প্রবলভাবে? একেবারে পার্পল ক্যাপের লড়াইয়ে?

বেঙ্গালুরুর হয়ে প্রথম তিন ম্যাচে সিরাজের শিকার পাঁচ উইকেট। আসর শেষে কোথায় থাকবে এই পেসার?আর্শদিপ সিং-পাঞ্জাব কিংসআর্শদিপ সিং (পাঞ্জাব কিংস)

আইপিএলে আলো ছড়িয়ে জাতীয় দলে জায়গা করে নেয়া আরেক বোলার আর্শদিপ সিং। ২০১৯ সালে পাঞ্জাব কিংসের হয়ে আইপিএল পথচলা শুরু। এখনও সেই তাঁবুতেই এই বাঁহাতি পেসার। 

শুরুর দুই মৌসুমে তেমন পারফর্ম করতে পারেননি। ২০২১ থেকে পাঞ্জাবের আস্থার প্রতিদান দেয়া শুরু। ২০২২ সালেই পেয়ে যান জাতীয় দলের টিকেট। 

আর্শদিপের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরুটা বেশ রোমাঞ্চকর। ২০২২ সালে জুলাইয়ে ইংল্যান্ড সফরে ডাক পান। একাদশে জায়গা পাকা করতে পারেননি তখন। 

পরের মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টি-টোয়েন্টিতে পাঁচ ম্যাচ ৭ উইকেট নেন আর্শদিপ। দলের সিরিজ জয়ে নিজে জেতেন প্লেয়ার অব দ্য সিরিজের পুরস্কার। জায়গা করে নেন ভারতের এশিয়া কাপ স্কোয়াডেও।

কিন্তু এশিয়া কাপের সুপার ফোরে পাকিস্তানের বিপক্ষে সহজ ক্যাচ মিসে ভিলেন বনে যান ২৪ বছর বয়সী উঠতি তারকা। আর্শদিপকে ঘিরে শুরু হয় নানা সমালোচনা।

তাতে কুঁকড়ে যাননি। বরং জবাবটা দিয়েছেন পরের মাসেই। বিশ্বকাপের মঞ্চে। ৬ ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টে ভারতের সফলতম বোলার আর্শদিপ। আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের পূর্ণ হয়নি এখনও গোটা বছর। এর মধ্যে ২৬ ম্যাচ খেলে তুলে নিয়েছেন ৪১ উইকেট।

সেই ফর্ম নিয়েই আর্শদিপ শুরু করেছেন আইপিএলে নিজের পঞ্চম আসর। তিন ম্যাচে নিয়েছেন ছয় উইকেট। পার্পল ক্যাপের সঙ্গে দূরত্ব এখনও বিস্তর। পাঞ্জাব কিংসের এই পেসার কি সে দূরত্ব ঘোচাতে পারবেন?

যুজবেন্দ্র চাহাল-রাজস্থান রয়্যালসযুজবেন্দ্র চাহাল (রাজস্থান রয়্যালস)

দারুণ এক লেগ স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহাল। এই ৩২ পেরোনো বয়সেও। গতবারই তো আইপিএলের সর্বোচ্চ উইকেট নিয়ে জিতেছেন পার্পল ক্যাপ। মুকুটটা ধরে রাখতে পারবেন চাহাল?

আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক চাহাল। ৭৫ ম্যাচে নিয়েছেন ৯১ উইকেট। ১৩৪ ম্যাচে ১৭৪ উইকেট নিয়ে আইপিএল ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটের মালিকও তিনি। ভারতীয়দের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। 

মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের হয়ে ২০১১ সালে আইপিএলে ডাক পান চাহাল। কিন্তু প্রথম দুই মৌসুম ডাগ আউটে কাটিয়ে তৃতীয় মৌসুমে খেলেন মাত্র একটি ম্যাচ। 

ভাগ্য বদলেছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুতে এসে। ২০১৪ থেকে ২০২১ পর্যন্ত খেলছেন টানা। ২০১৫ এবং ২০১৬ আসরে চাহাল ছিলেন দলটির সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। বেঙ্গালুরুর হয়ে আট আসরে ১১৩ ম্যাচে নেন ১৩৯ উইকেট। যেটি বেঙ্গালুরুর হয়ে কোন বোলারের সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ড।

তবুও ২০২২ সালে দলটি ছেড়ে দেয় চাহালকে। সাড়ে ছয় কোটি রুপিতে রাজস্থান রয়্যালস কেনে চাহালকে। এখানেই ১৭ ম্যাচে ২৭ উইকেট নিয়ে প্রথমবারের মতো এই লেগস্পিনার জেতেন পার্পল ক্যাপ। 

গতবার যেখানে শেষ করেছেন, এবার ঠিক সেখান থেকেই যেন শুরু করেছেন চাহাল। তিন ম্যাচে নিয়েছেন আট উইকেট। তাহলে কি আবারও চাহালের মাথায় উঠতে যাচ্ছে পার্পল ক্যাপ? 

উমরান মালিক-সানরাইজার্স হায়দরাবাদউমরান মালিক (সানরাইজার্স হায়দরাবাদ)

উমরান মালিক মানেই গতির ঝড়। ঘন্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করেন নিয়মিত। এই গতি দিয়েই নজর কাড়েন তিনি। সেটি কি উমরানকে নিয়ে যাবে পার্পল ক্যাপের কাছে?

২০২১ সালে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের জার্সিতে আইপিএল অভিষেক উমরানের।  প্রথম মৌসুমে তেমন একটা সুযোগ পাননি। জ্বলে উঠেছেন পরের আসরে। ১৪ ম্যাচে ২২ উইকেট নিয়ে ছিলেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় চতুর্থ স্থানে। পুরস্কার হিসেবে ডাক পেয়ে যান ভারত জাতীয় দলেও।

এবারের আসরে শুরুটা মন্দের ভালো উমরানের। প্রথম তিন ম্যাচে নিয়েছেন চার উইকেট। এই ‘ওয়ার্ম আপ’-এর পর যদি গতির আগুন জ্বালাতে পারেন, তাহলে পার্পল ক্যাপটা তো হতে পারে উমরানেরও। 

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Add