আইপিএলে কি ম্যাচ পাতানো হয়?

১ জুন ২০২৩

আইপিএলে কি ম্যাচ পাতানো হয়?

কী ফাইনাল! দম বন্ধ করে দেওয়া এক ম্যাচ। রোমাঞ্চের সব উপাদান নিয়ে মঞ্চায়িত হয়েছে আইপিএল ১৬তম আসরের ফাইনাল। তারপরও কি পুরনো দাগ গা থেকে মুছতে পেরেছে ভারতীয় প্রতিযোগিতাটি?

আইপিএলে ম্যাচ পাতানো হয়- এই আলোচনা সেই কবে থেকে। ১৬টি আসর শেষ হওয়ার পরও বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় টি-টোয়েন্টি লড়াই ঠিক বিশ্বাসে রূপ নিতে পারছে না। বরং এবারের আসরে পুরনো প্রশ্নটা আরও দানা বেঁধেছে।

অর্থের ঝনঝনানিতে আইপিএলের ম্যাচ পাতানো হয়। পুরোটাই সাজানো। স্ক্রিপ্টেড। আসলেই কি তাই?

এবারের আইপিএলে হয়েছে ৭৪টি ম্যাচ। এর মধ্যে ৩২ ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ হয়েছে শেষ ওভারে। শতাংশের হিসাবে মোট ম্যাচের ৪৩.২৪ ভাগ। একটি টুর্নামেন্টের প্রায় অর্ধেক ম্যাচ যদি শেষ ওভারের নাটকীয়তায় জমে ওঠে, সেখানে পাতানো খেলার বিষয়টি সামনে চলেই আসে!

ওভারেই শেষ ৫ বলে ৫ ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ জেতান কলকাতার রিংকু সিংএবারের আইপিএলে ‘পাতানো খেলা’ বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে কলকাতা নাইট রাইডার্স ও গুজরাট টাইটানস ম্যাচে। ওই ম্যাচে জয় পায় কলকাতা। ২০৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নামে তাঁরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য কলকাতার প্রয়োজন ছিল ২৯ রান। ওই ওভারেই শেষ ৫ বলে ৫ ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ জেতান তরুণ ব্যাটার রিংকু সিং। আর তাতেই নতুন বিতর্ক। এরকম জয় সম্ভব নাকি?

আবার যদি ফাইনাল ম্যাচের কথা বলা হয়। সেখানেও আছে ম্যাচ পাতানোর ইঙ্গিত। শিরোপার লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়েছিল গুজরাট টাইটানস-চেন্নাই সুপার কিংস। আহমেদাবাদে বৃষ্টিবিঘ্নিত ফাইনালে ১৫ ওভারে চেন্নাইয়ের টার্গেট ঠিক হয় ১৭১ রান।

শেষ ওভারে চেন্নাইয়ের প্রয়োজন পড়ে ১৩ রান। প্রথম ৪ বলে ৩ রান দিয়েছিলেন গুজরাটের মোহিত শর্মা। শেষ ২ বলে প্রয়োজন ১০ রান। কঠিন সেই সমীকরণ মিলিয়ে দেন রবীন্দ্র জাদেজা। পঞ্চম বলে ছক্কা, আর শেষ বলে চার মেরে চেন্নাইকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দেন তিনি। শ্বাসরুদ্ধর ম্যাচের ফাঁকে ছড়ায় পাতানো ম্যাচের দুর্গন্ধ।

২ বলে ১০ রান করে চেন্নাইকে পঞ্চম শিরোপা এনে দেন জাদেজা আগের দুটো ম্যাচে বেশি রান করে দলগুলো জিতেছে। তবে সন্দেহের পাল্লা ভারী হয় যখন দেখা যায় রানের বন্যা বয়ে দেওয়া আইপিএলেই আবার কম রানের জন্য দলগুলো কঠিন পরীক্ষা দিয়েছে। ম্যাচ নিয়ে গেছে শেষ ওভারে। 

রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু-লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের ম্যাচটার দিকে তাকানো যাক। বেঙ্গালুরুর দেয়া ২১৩ রানের টার্গেটে ব্যাট করছিল লক্ষ্ণৌ। শেষ ১২ বলে প্রয়োজন ১৫ রান। হাতে ৪ উইকেট। কিন্তু হঠাৎ ছন্দপতন তাঁদের। উইকেট হারাতে থাকে। চূড়ান্ত নাটকীয়তার পর শেষ বলে ১ উইকেটে জয় পায় লক্ষ্ণৌ। 

এই ম্যাচ নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। কারণ টেল-এন্ডারদের জন্য কাজটা সহজ ছিল না।

এবার তাহলে আরেকটি ম্যাচ দেখা যাক! মুখোমুখি দিল্লি ক্যাপিটালস-মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। দিল্লির দেয়া ১৭৩ রানের টার্গেটে ব্যাট করছিল মুম্বাই। শেষ ১২ বলে প্রয়োজন ২০ রান। হাতে আছে ৬ উইকেট। ১৯তম ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে তোলে ১৫ রান। শেষ ওভারে দরকার ৫ রানের।

ইনিংসের শেষ বলে ২ রান নিয়ে ৬ উইকেটে ম্যাচ জেতে মুম্বাই আর সেই রান করতেই প্রতিষ্ঠিত ব্যাটারদের রীতিমতো কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছে। ইনিংসের শেষ বলে ২ রান নিয়ে ৬ উইকেটে ম্যাচ জেতে তাঁরা।

এই ম্যাচ দিয়ে হয়তো পাতানো খেলার ছবি পুরোপুরি স্পষ্ট হয় না। কিন্তু রিংকু সিংয়ের সেই পাঁচ ছক্কা কিংবা ফাইনালে জাদেজার ২ বলে ১০ রানের সমীকরণ মিলিয়ে দেওয়ার ঘটনা দুটি সামনে আনলে ব্যাপারটি কী দাঁড়ায়? এই ম্যাচ দুটি কি সত্যি পাতানো? চলুন অন্যভাবে বোঝার চেষ্টা করি এবার।

আচ্ছা, যদি ধরেই নেয়া হয় রিংকুর বিপরীতে থাকা যশ দয়াল ইচ্ছে করে খারাপ বল করেছেন। তবুও তো ৫ বলে ৫ ছক্কা হাঁকানো সহজ কাজ নয়! ক্রিকেটীয় দক্ষতা না থাকলে সেটি কারও দ্বারা সম্ভব নয়। 

বোলার ইচ্ছে করে খারাপ বল করলেও, ব্যাটের যেকোনো পাশে লেগে সেটি ছয়ের পরিবর্তে চার হতে পারতো। টাইমিং সঠিক না হবার কারণে সেটি বাউন্ডারি না হয়ে সিঙ্গেল বা ডট বল হতে পারতো। জয়ের জন্য সেখানে কেউ শতভাগ নিশ্চিত হতে পারতো না। 

কিন্তু রিঙ্কু সেটি করেছেন। তাঁর ক্রিকেটীয় দক্ষতার প্রমাণ দিয়ে কঠিন পরিস্থিতি সামলে দলকে জিতিয়েছেন৷ 

আবার জাদেজার ক্ষেত্রেও টাইমিং বাজে হয়ে প্রথমটি চার হতে পারতো। শেষ চারটি আবার ছক্কাও হতে পারতো অথবা বল পায়ে ছিল দেখে ডটও হতো পারতো। কিন্তু সেটা হয়নি। মোহিত শর্মা ইচ্ছে করে খারাপ করলেও ফাইনালের যে চাপ ছিল সেখানে রান করা নিশ্চয়ই কঠিন ছিল। তবে জাদেজা সেটি সামলেছেন। ব্যাক টু ব্যাক বাউন্ডারিতে দলকে পঞ্চম শিরোপা জিতিয়েছেন। 

তাহলে? আইপিএল কি আসলেই স্ক্রিপ্টেড? পাতানো হয় ম্যাচ? এই প্রশ্নের উত্তর মেলানো কঠিন। তবে পাতানো হলেও সেখানে যে ক্রিকেটীয় দক্ষতা প্রয়োজন, সেটি নিশ্চিত। আর তাই সবশেষে জয় ক্রিকেটেরই!

মন্তব্য করুন: