প্রথমবার সুপার ওভারে উঠে হারল বাংলাদেশ
২১ অক্টোবর ২০২৫

স্পিনারদের দুর্দান্ত লড়াই শেষে ম্যাচ গড়িয়েছিল সুপার ওভারে। পুরো ওভার দারুণ বোলিং করা মুস্তাফিজুর রহমান শেষ বলে চার হজম করলে ১০ রান তোলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আকিল হোসেইনের ওভারে অতিরিক্ত তিনটি বল হলেও পাওয়ার হিটিংয়ের অভাবে সেই রান তাড়া করতে পারেনি বাংলাদেশ। রোমাঞ্চকর ম্যাচ জিতে সিরিজে সমতায় ফিরেছে ক্যারিবিয়ানরা।
মঙ্গলবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ২১৪ রান তাড়া করতে নেমে শেষ ওভারে জয়ের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার ছিল ৫ রান। হাতে ছিল ২ উইকেট। ৪ রান তুলে ম্যাচ ম্যাচ সুপার ওভারে নিয়ে যায় অতিথিরা।
পিচ রিপোর্টের সময়েই বোঝা গেছে প্রথম ম্যাচের তুলনায় কালো মাটির ঘাসহীন পিচের অবস্থা আরও খারাপ। সে অনুযায়ী স্পিন নির্ভর সাজায় দু’দলই। আর বল হাতে পুরো ৫০ ওভারই স্পিনারদের দিয়ে করিয়ে ইতিহাসের পাতায় নাম তোলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথম কোনো দল হিসেবে পুরো ইনিংসেই স্পিনার দিয়ে বোলিং করানোর রেকর্ড গড়ে তারা।
শুধু তাই নয়, এক ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি ওভার স্পিনারদেরকে দিয়ে করানোর রেকর্ডও হয়েছে এই ম্যাচে। দুই দলের স্পিনাররা বল করেছেন মোট ৯২ ওভার, বাকি ৮ ওভার করেন মুস্তাফিজ। ভেঙে যায় ২০১৯ সালে দেহরাদুনে আফগানিস্তান-আয়ারল্যান্ড ম্যাচে স্পিনারদের ৭৮ ওভার ২ বল বোলিংয়ের রেকর্ড।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৭ উইকেটে ২১৩ রান তোলে বাংলাদেশ। আগের ম্যাচের তুলনায় শুরুটা ভালো করে স্বাগতিকরা। প্রথম ১০ ওভারে ৪০ রান তুলতে হারায় ১ উইকেট। সাইফের (৬) বিদায়ে থামে ২২ রানের উদ্বোধনী জুটি। তাওহিদ হৃদয় ১২ রান করে সাজঘরের পথ দেখেন।
তৃতীয় উইকেটে বেশ স্বাচ্ছন্দে স্পিনারদের সামলাচ্ছিলেন সৌম্য ও নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু ব্যক্তিগত ১৫ রানে শান্ত নিজের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এলে কমে আসে রানের গতিও। বাউন্ডারি তো আসেইনি, দৌড়েও রান তোলায় ছিল ঘাটতি।
ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বাউন্ডারির কাছে ক্যাচ দেন মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন (১৭)। খানিকবাদে বিদায় নেন ফিফটির পথে থাকা সৌম্য (৪৫)। এরপর রানের গতি আরও কমে যায়। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নাসুম আহমেদকে নিয়ে ৪৮ বলে ২৫ রানের জুটি গড়েন মিরাজ। নাসুমের (১৪) বিদায়ের পর নুরুল হাসান সোহান এলে রানের কিছুটা গতি বাড়ে। ২৪ বলে ২৩ রান করা সোহানের বিদায়ের পর ক্রিজে এসে ঝড় তোলেন রিশাদ। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত থাকেন ১৪ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৩৯ রানে। শেষ ১০ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে দলের খাতায় ৮২ রান যোগ হয়।
লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম ওভারেই ব্র্যান্ডন কিংয়ের উইকেট হারায় ক্যারিবিয়ানরা। তবে দ্বিতীয় উইকেটে ৫১ রানের জুটির পর তৃতীয় উইকেটে ৩০ রানের জুটিতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের দিকে রাখার আভাস দেয় তারা। কিন্তু রিশাদ হোসেন ও তানভীরের নৈপুণ্যে চাপে পড়ে সফরকারীরা।
এক প্রান্ত আগলে রেখে দলকে জয়ের দিকে নিতে থাকেন অধিনায়ক সেই হোপ। অষ্টম উইকেটে জাস্টিন গ্রিভসের সঙ্গে গড়েন ৪৪ রানের জুটি। এরপর হোসেইনের সঙ্গে ২৪ রানের জুটিতে দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিলেন অপরাজিত ৫৩ রান করা ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক।
হিসেবে গোলমাল করে শেষ ওভারটায় সাইফের হাতে বল তুলে দিতে হয় অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজকে। তবে দারুণ বোলিংয়ে প্রথম দুই বল ডট দেওয়ার পর এক উইকেটও তুলে নেন তিনি। শেষ বলে ক্যারিবিয়ানদের দরকার ছিল ৩ রান। ক্রিজে এসেই ক্যারি পিয়ার বলটি উপরে তুলে মারেন। ক্যাচ নেওয়ার জন্য উইকেটের পেছন থেকে দৌড় দেন নুরুল হাসান সোহান। সময় মতো বলের নাগাল পেলেও তার গ্লাভস গড়িয়ে বল পড়ে যায়। আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবার সুপার ওভারের অভিজ্ঞতা হয় বাংলাদেশের।
সুপার ওভারে মুস্তাফিজের করা করা শেষ বলে হোপ চার মারলে ১০ রান তুলতে পারে অতিথিরা। ১১ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ব্যাটিংয়ে নামেন সৌম্য সরকার ও সাইফ হাসান।
বল হাতে প্রথম দুই বল ওয়াইড ও নো দেন হোসাইন। চতুর্থ বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ডিপ স্কোয়ার লেগে ক্যাচ দেন সৌম্য। পরের বলে লেগ-বাই থেকে দৌড়ে এক রান নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। পরের বলটিতে আবারও ওয়াইড দেন হোসাইন। শেষ বলে ৩ রান দরকার ছিল, কিন্তু ভালোভাবে বল ব্যাটে লাগাতে পারেননি সাইফ।
আগামী বৃহস্পতিবার একই মাঠে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে।
[বিস্তারিত তথ্য পরবর্তীতে সংযোজন করা হয়েছে।]
মন্তব্য করুন: