ওয়ানডে ও টেস্ট ক্রিকেটে দেশকে আমার এখনও দেয়ার আছে: ইমরুল কায়েস

ওয়ানডে ও টেস্ট ক্রিকেটে দেশকে আমার এখনও দেয়ার আছে: ইমরুল কায়েস

জাতীয় দলের সুযোগের অপেক্ষা পেরিয়েছে চার বছর। তাঁর ক্যাপ্টেন্সিতে তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। বর্তমানে জাতীয় দলে নিয়মিত না হলেও ফ্রাঞ্চাইজি লিগে সফল এক মুখ ইমরুল কায়েস। তার এই ম্যাজিকাল ক্যাপ্টেন্সির পেছনের গল্প শুনিয়েছেন নোমান মোহাম্মদকে...

নোমান মোহাম্মদ: আপনাকে অভিনন্দন। আপনার নেতৃত্বে আরও একবার চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ক্যাপ্টেন্সির ম্যাজিকটা কী? 

ইমরুল কায়েস: না! ক্যাপ্টেন্সির কোন ম্যাজিক নেই। দল হিসেবে মাঠে আমরা সবাই ভালো ক্রিকেট খেলেছি এবং এজন্যেই হয়তো আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে সক্ষম হয়েছি। 

নোমান মোহাম্মদ: আপনি এত ভালো ক্যাপ্টেন, বিপিএলের আগে এটি জানতেন?

ইমরুল কায়েস: (হাসি) না, এমনটি না। এর আগে ডিপিএলেও ক্যাপ্টেন্সি করেছি এবং চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। ভালো ক্যাপ্টেন না খারাপ এটা জানি না, দলের হয়ে শতভাগ দেয়ার চেষ্টা করি সবসময়। ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে দলের প্রয়োজনকে বেশি প্রাধান্য দেই।

ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে দলের প্রয়োজনকে বেশি প্রাধান্য দেই: কায়েস

নোমান মোহাম্মদ: দীর্ঘ ১০/১১ বছর ধরে জাতীয় দলে খেলেছেন। ‘ক্যাপ্টেন ম্যাটেরিয়াল’ ইমরুলের মধ্যে আমরা সে সময় লক্ষ করিনি। কিন্তু ডিপিএল বা বিপিএলে প্রবলভাবে প্রকাশ পেয়েছে। এটা কি বলা যায়, ক্যাপ্টেন ইমরুলকে তৈরি করেছে বিপিএল?

ইমরুল কায়েস: বলা যায়। কারণ আমার সফলতা বিপিএলেই। গত তিন বছর কুমিল্লার হয়ে সফলভাবে নেতৃত্ব দিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে আমি অনেক কাজ করি, বড় বড় তারকা ক্যাপ্টেনদের অনুসরণ করি; তারা কোন পরিস্থিতিতে কি করছে সেটা খেয়াল করি এবং সেগুলো মাঠে কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। 

নোমান মোহাম্মদ: কুমিল্লা ফ্রাঞ্চাইজির হয়ে ক্যাপ্টেন্সি কতটা উপভোগ করেন? কতটা আনন্দদায়ক? 

ইমরুল কায়েস: কুমিল্লার মতো দলকে নেতৃত্ব দেয়া অনেক বড় সৌভাগ্যের ব্যাপার। এখানে মাশরাফি, স্টিভ স্মিথের মতো তারকা খেলোয়াড়রা নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। দল ভালোভাবে পরিচালনা করতে পারব এমন বিশ্বাস রেখেই হয়তো তাঁরা (ফ্রাঞ্চাইজি মালিকপক্ষ) আমাকে বেছে নিয়েছেন। অবস্থানটি আরও বেশি সহজ হয়েছে আমাদের কোচ সালাউদ্দিন স্যারের জন্য। তাঁর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তিনি থাকাতে খুব বেশি সমস্যায় পড়তে হয়না আমাকে, কাজ অনেকটা সহজ হয়েছে স্যারের জন্যে। মাঠের বাইরের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত, খেলোয়াড় নির্ধারণ এসব তিনি অকপটে আমার সাথে আলোচনা করেন। কুমিল্লা দলটি আসলে একটি পরিবারের মতো। এখানে যারা খেলেন তাঁরা পরবর্তীতে আবারও খেলতে আগ্রহী থাকেন। যারা খেলেননি তাঁরা হয়তো এই অনুভূতিটা বুঝবেন না। 

নোমান মোহাম্মদ: এবারের আসরে প্রথম তিন ম্যাচ হারের পর দলের অবস্থা কেমন ছিল?

ইমরুল কায়েস: প্রথম দুই ম্যাচ হারের পরও আমরা স্বাভাবিক ছিলাম। কিন্তু তৃতীয় ম্যাচে বরিশালের বিপক্ষে হারের পর চিন্তায় পড়ি। সেমিতে যেতে হলে সামনে প্রতিটা ম্যাচ আমাদের জিততে হবে। নাফিসা আপু এবং তাঁর পরিবার ক্রিকেটের প্রতি অনেক আবেগপ্রবণ। তিনি (নাফিসা কামাল) চট্টগ্রামে গিয়ে খেলোয়াড়, কোচ, ম্যানেজমেন্ট সবার সাথে আলোচনায় বসলেন। আমরাও তাঁকে আশ্বস্ত করলাম যে, কুমিল্লা সবসময় প্রথমে হারে এবং পরবর্তীতে ঘুরে দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত যা হয়েছে সেটি আপনারা সবাই দেখেছেন। ফ্রাঞ্চাইজি  লিগে টানা ১১ ম্যাচ জেতা অনেক বড় একটি অর্জন।

নোমান মোহাম্মদ: কুমিল্লা শিরোপা জিতেছে চারবার। প্রতিবারই আপনি দলের অংশ ছিলেন এবং শেষ তিনবার ছিলেন নেতৃত্বে। প্রথমে তিন ম্যাচ হেরে টানা ১১ ম্যাচ জয়ের কারণে এবারের আসর কি বাড়তি স্পেশাল?

ইমরুল কায়েস: অবশ্যই। এক দিক থেকে ভালো যে হেরেছি প্রথম দিকেই। মাঝে বা শেষে হারতে থাকলে সেখান থেকে ফেরা অনেক কঠিন হয়ে যেত। প্রথম দিকে হারলে দলের বিভিন্ন দুর্বলতা অনেক সহজেই বোঝা যায় এবং সেই অনুযায়ী পরবর্তী পরিকল্পনা সাজানো যায়। প্রথম দুই ম্যাচে তানভীর একাদশে ছিলেন না, কিন্তু পরবর্তীতে খেলেছেন। আসরে মূল বোলারদের একজন ছিলেন তানভীর ।  

নোমান মোহাম্মদ: তানভীরকে বসিয়ে রাখা কি কৌশলগত সিদ্ধান্ত ছিল?

ইমরুল কায়েস: প্রথমটি ছিল। পরেরটি আমার জানা নেই। আমি চেয়েছিলাম, কিন্তু মালিকপক্ষ-কোচ-ম্যানেজমেন্ট সব মিলিয়ে সামগ্রিক একটি সিদ্ধান্ত থাকে। এরপর থেকে তাঁকে দলে নেয়ার ক্ষেত্রে আমি পরিষ্কার ছিলাম এবং শেষ পর্যন্ত তানভীর খুব ভালো পারফর্ম করেছেন। এ বছর একই সাথে একাধিক ফ্রাঞ্চাইজি লিগ চলায় বিদেশি খেলোয়াড়দের পরিবর্তন বেশি সংখ্যায় হয়েছে। কিন্তু আমরা একমাত্র দল যেখানে মাত্র দুবার পরিবর্তন এসেছে। 

নোমান মোহাম্মদ: অধিনায়কত্ব ছাড়া আপনার পারফরমেন্স বিশেষ করে নিজের ব্যাটিং নিয়ে আপনি নিশ্চয়ই সন্তুষ্ট নন? 

ইমরুল কায়েস: না, একদমই না। আমি সত্যি কথা বলতে পছন্দ করি। দেখেন, গত ৭/৮ বছর ধরে আমি বিপিএলে যেভাবে খেলে আসছি, এ বছর সেটা পারিনি।  অন্তত তিন-চারটি ফিফটি থাকা উচিত কিন্তু আমি করতে পারিনি। প্রথমদিকে যখন রান পাচ্ছিলাম তখন মনে হচ্ছিলো সেরা পাঁচে থাকব, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেভাবে হয়নি। কখনো কখনো দলের প্রয়োজনে রান বাড়ানোর তাগিদ ছিল। তখন আমি ব্যক্তিগত সংগ্রহ বাড়ানোর চেয়ে দলকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যাওয়াকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছি। দল যাতে ভালো অবস্থানে যায় সেটা চিন্তা করেছি সব সময়। তাই হয়তো হয়নি। 

২০১৯ বিশ্বকাপে যখন দলে সুযোগ পেলাম না তখন অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলাম।

নোমান মোহাম্মদ: আবারও জাতীয় দলে খেলার তো স্বপ্ন আছে?

ইমরুল কায়েস: অবশ্যই আছে। 

নোমান মোহাম্মদ: অবশ্যই সেটা ক্যাপ্টেন ইমরুল কায়েস হিসেবে না...

 ইমরুল কায়েস: হা হা হা

নোমান মোহাম্মদ: পারফর্মার হিসেবেই সুযোগ আসবে তাই তো - সেইদিক থেকে যদি আমি বলি জাতীয় দলে পুরোনো কোচ আবার নতুন হয়ে এসেছেন, তাই বিপিএলে খারাপ করাটা আরেকটি প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে কিনা? 

ইমরুল কায়েস: হুম... (একটু চিন্তা করে) যেটা চলে গেছে, গেছে। সেটি নিয়ে আমি আর ভাবছিনা। আমার ক্যারিয়ারে অনেক কিছুই হতে পারতো, আমি যদি চিন্তা করি, হয়নি। যেটা হয়নি, হয়নি। এখন যেটা সামনে আছে, সেটা নিয়ে ফোকাস করছি। সামনে যা আসছে সেটাই লক্ষ্য। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট নিয়ে এখন সেভাবে চিন্তা-ভাবনা নেই। কিন্তু আমি সবসময় বিশ্বাস করি, ওয়ানডে ও টেস্ট ক্রিকেটে দেশকে আমার এখনও দেয়ার আছে। 

নোমান মোহাম্মদ: দেশের হয়ে ২০১৭ সালে শেষ টি-টোয়েন্টি, ২০১৮ সালে শেষ ওয়ানডে এবং ২০১৯ সালে খেলেছেন শেষ টেস্ট। চার বছর পেরিয়ে গেছে সাথে আপনার বয়স এখন ৩৬। বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি বলে সিনিয়র খেলোয়াড়দের তেমন সুযোগ দেয়া হয় না। এই বাস্তবতায় জাতীয় দলে ফেরা কতটা কঠিন মনে হয়?

ইমরুল কায়েস: কঠিন মনে হয় না। ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো পারফর্ম করলে দলে আসা অনেক সহজ। জাতীয় দলে খেলার জন্যে কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারেনা। অনেক সময় খেলায় একটি নির্দিষ্ট জায়গায় একজন খেলোয়াড়ের প্রয়োজন হয়। তাই, আমি মনে করি, শারীরিক ফিটনেস, ব্যাটিং কৌশল, ছন্দ এগুলো ভালো থাকলে ফেরা সম্ভব। 

নোমান মোহাম্মদ: টি টোয়েন্টি বাদ দিয়ে আপনার লক্ষ্য ওয়ানডে এবং টেস্টের দিকে। টেস্টকে বাদ দিয়ে যদি বলি, ওয়ানডে থেকে চার বছর আগে যেভাবে বাদ পড়েছেন সেই কষ্ট কি কমেছে?

ইমরুল কায়েস: (হাসি) আমার কষ্ট নেই! তবে ২০১৯ বিশ্বকাপে যখন দলে সুযোগ পেলাম না তখন অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলাম। আমার ক্রিকেটীয় লক্ষ্য সবসময় জাতীয় দল কেন্দ্রিক। ২০১৯ বিশ্বকাপের আগে ভালো ফর্মে ছিলাম। কিন্তু ওই অবস্থায় দলে জায়গা না পেয়ে অনেকটা হতাশ হয়ে পড়ি। নিজেকে তখন মানিয়ে নিতে পারছিলাম না। সেই জায়গা থেকে কিছুদিন বিরতি নিয়ে মানসিক অবস্থায় পরিবর্তন এনে আবারও ক্রিকেটে মনোনিবেশ করি এবং বিশ্বাস রাখি ভালো খেললে সামনে সুযোগ আসবে। 

নোমান মোহাম্মদ: একটি সিরিজে ১৪৪, ৯০ ও ১১৫ রান নিয়ে দেশের হয়ে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের সর্বোচ্চ ৩৪৯ রান করেছেন। পরবর্তী দু ম্যাচে রান পাননি এবং বাদ পড়েছেন। এ বছর আরও একটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ এবং সামনে প্রিমিয়ার লিগ। এই ফরম্যাট দিয়েই কি জাতীয় দলে ফেরার সুযোগ বেশি? 

ইমরুল কায়েস: আমিও তাই মনে করি। দেখেন, ছোট থেকেই ওয়ানডে ক্রিকেট সবচেয়ে বেশি উপভোগ করি। আন্তর্জাতিক বা প্রিমিয়ার লিগে এই ফরম্যাটেই আমার পরিসংখ্যান সবচেয়ে ভালো। সামনে বিশ্বকাপ, দলের যদি প্রয়োজন হয় আমি প্রস্তুত থাকব। 

নোমান মোহাম্মদ: পুরোনো কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে আবার নতুন হয়ে এসেছেন। কেমন করবেন?

ইমরুল কায়েস: অবশ্যই ভালো করবেন। প্রধান শিক্ষক যখন তাঁর ছাত্রদের আগে থেকেই চিনেন, তখন কাজ আরও সহজ। এর আগে তাঁর অধীনে আমরা যারা খেলেছি ৬০/৭০ শতাংশই এখনও আছেন। তাঁদের নিয়ে আবারও ভালো দল তৈরি করতে পারবেন।

নোমান মোহাম্মদ: প্রধান শিক্ষক হাথুরুসিংহের সঙ্গে ছাত্র ইমরুলের সম্পর্ক কেমন?

ইমরুল কায়েস: ভালো। জাতীয় দলে এখন পর্যন্ত যতগুলো কোচের অধীনে খেলেছি, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। প্রথম দিকে ব্যক্তিগতভাবে আমার সম্পর্ক যদিও তেমন ভালো ছিল না, কিন্তু তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি এবং ভালো খেলেছি।  

নোমান মোহাম্মদ: হাথুরুসিংহের সঙ্গে সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাশরাফি, রিয়াদসহ অনেকের সঙ্গেই হয়তো সমস্যা ছিল। এর মধ্যে দিয়েও সে সময় জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা নিজেদের সেরা ফর্মে ছিলেন। এখন সেই একই হাথুরুসিংহেকেই আপনি আশা করেন নাকি ভিন্ন কোন ভাবে?

ইমরুল কায়েস: হয়তো ভিন্ন। তিনি অনেক বছর পর এসেছেন। আমরা তখন তরুণ ছিলাম, যদিও তামিম-সাকিব-মুশফিক তখন ১০/১২ বছর খেলে ফেলেছিলেন। সবাইকে এক মাপকাঠিতে বিবেচনার চিন্তা-ভাবনা হয়তো তাঁর ছিল। কিন্তু এখন ভিন্নও হতে পারে। তিনি চলে যাওয়ার পরেও অনেকেই তাঁর সাথে যোগাযোগ রেখেছেন, যখন অস্ট্রেলিয়াতে ছিলেন।

নোমান মোহাম্মদ: আপনার সাথে কী যোগাযোগ ছিল?

ইমরুল কায়েস: ব্যাটিংয়ের বিভিন্ন কৌশল নিয়ে আমি মাঝে মধ্যেই যোগাযোগ করেছি। কৌশলগত দিক দিয়ে তাঁর কাছ থেকে সাহায্য পেয়েছি বলেই বিশ্বাসের জায়গা শক্ত হয়েছে। 

নোমান মোহাম্মদ: হাথুরুসিংহের অধীনে দল আবারও ভালো করবে বলে আশা করছেন। সেই দলের অংশ হতে হলে সামনে আরও কী করতে হবে?

ইমরুল কায়েস: (হাসি) রান করতে হবে।

নোমান মোহাম্মদ: কত রান?

ইমরুল কায়েস:(হাসি) কত রান করতে হবে এটা বলা মুশকিল। ঘরোয়া লিগে যদি ভালো রান পাই, ভালো ছন্দে থাকি তাহলে আবারও সুযোগ আসতে পারে। দেখেন, গত বছর বিজয় দলে ছিলনা। দলের বাইরে অনেকদিন থেকেও গত বছর ঘরোয়া লিগে ভালো করেছে এবং দলেও চলে এসেছে। তাই, কেউ বলতে পারবেনা কে কোথায় যাবে বা যাবেনা। আমার মনে হয় জাতীয় দল ওপেন এবং যে কেউ যোগ্যতা প্রমাণ করলে দলে আসতে পারে। ঘরোয়া লিগে যদি ভালো রান পাই, ভালো ছন্দে থাকি তাহলে আবারও সুযোগ আসতে পারে: ইমরুলনোমান মোহাম্মদ: টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে, টেস্ট সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম এখন কোন অবস্থানে আছে? হাথুরুসিংহে প্রথম এসেছিলেন ২০১৪ সালে, ২০২৩ এ আবার আসছেন। আমরা কি সেই সময়ের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছি? নাকি খারাপ, অথবা একই অবস্থানে আছি? 

ইমরুল কায়েস: ওয়ানডে ফরম্যাটে আমরা ভালো অবস্থানে আছি, এটা মানতে হবে। টেস্টে আমরা আগের জায়গায় আছি বা খারাপ অবস্থানে। আগে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছি, অনেক টেস্ট ড্র করেছি, কিন্তু এখন সাফল্য সেভাবে নেই। টি-টোয়েন্টিতে আরও উন্নতির জায়গা রয়েছে। আধুনিক ক্রিকেটে অনেক পরিবর্তন আসছে। কৌশলগত দিক বা পাওয়ার হিটিং স্কিল নিয়ে অনেক কাজ করছে অন্যান্যরা। কিন্তু সেসব জায়গায় আমরা পিছিয়ে।  ১৫০/১৭০ এর গণ্ডি পেরিয়ে যেদিন ১৮০/২০০ রান করতে পারব তখন বলা যায় যে টি-টোয়েন্টিতে ভালো অবস্থানে আছি।

নোমান মোহাম্মদ: হাথুরুসিংহের আগের আমলে দেশের ক্রিকেটের সাফল্যে সাকিব, তামিম, মুশফিক, রিয়াদ মূলত এরাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এখন তাঁরা সেই ফর্মে নেই। বর্তমান সময়ে হাথুরুসিংহের মূল খেলোয়াড় হবার দাবিদার কারা?

ইমরুল কায়েস: লিটন, শান্ত, আফিফ, মিরাজ এরা খুব ভালো করছেন। মূল জায়গা এখন এদের নেয়া উচিত। লিটন, মিরাজ ইতিমধ্যে ৭/৮ বছর ধরে খেলছেন। সাকিব, মুশফিক, তামিম তাঁদের সেরা সময়ে যেভাবে খেলেছেন, তাদেরও সেই সময় এখন চলে এসেছে। 

নোমান মোহাম্মদ: মুস্তাফিজ?

ইমরুল কায়েস: অবশ্যই, মুস্তাফিজ; আমি নামটা মিস করে ফেলেছি। সাথে তাসকিনও। আমার চোখে বাংলাদেশের পেস বোলিং বিভাগে নিজের সেরাটা নিয়ে ফিরেছেন তাসকিন। তাঁর এই ইতিবাচক পরিবর্তন থেকে অনেকের অনুপ্রেরণা নেওয়া উচিত। 

নোমান মোহাম্মদ: বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বাস্তবতায়, খেলোয়াড়রা পারফর্ম না করতে পারলে তাঁদের বিভিন্ন সমালোচনার বা ব্যাঙ্গ-বিদ্রূপের শিকার হতে হয়। এক সময় আপানার সাথেও এরকম ঘটেছে, এখন শান্ত বা মিঠুন এদের সাথেও ঘটছে। যদিও বিষয়টি খেলোয়াড়দের নিজেদেরই সামলে নিতে হয়, কিন্তু এক্ষেত্রে সমর্থকদের জন্য কিছু বলার আছে কি না?

ইমরুল কায়েস:  হ্যাঁ, অবশ্যই বলার আছে। আমাদের দেশে আবেগ, বিনোদন, ভালোবাসা সবকিছুর মূলে ক্রিকেট। যখন একটি খেলোয়াড়কে বিভিন্ন ট্রলের মধ্যে দিয়ে আঘাত করা হয়, তাঁর থেকে বেশি কষ্ট পায় তাঁর পরিবার। খেলোয়াড়রা দেশের সম্পদ। তাঁদের মানসিক দিকে বিপর্যস্ত করা মানে নিজ দেশকে পিছিয়ে দেয়া। সমর্থকদের কাছে এটিই অনুরোধ, খেলোয়াড়দের মানসিক সাপোর্ট দেয়া যাতে তাঁরা আরও ভালো খেলতে পারেন। আবেগের জায়গা থেকে এটা করা অবশ্যই কঠিন, কিন্তু নিজ দেশের স্বার্থে এই সাহায্য করা সবার উচিত।

নোমান মোহাম্মদ: শান্ত, লিটন, মিঠুন এদের সাথে বিভিন্ন সময় আপনি খেলেছেন। এরকম সময়ে তাঁরা নিশ্চয় মানসিকভাবে অনেক ভেঙে পড়েন।

ইমরুল কায়েস: ভেঙে পরাটাই স্বাভাবিক। একটি জিনিস যদি আপনি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন জায়াগায় দেখতে থাকেন স্বাভাবিক আপনাকে আঘাত করবে। এতে খেলোয়াড়দের অনেক ক্ষতি হয়। পরিবার ছেড়ে সবাই দিনে ৬/৭ ঘণ্টা পরিশ্রম করেন শুধু দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য। আমরা যখন ২০১১ তে খেলেছি তখন কিন্তু এত ব্যাঙ্গ-বিদ্রূপ ছিলনা, তখন খেলোয়াড়রা অনেক স্বস্তিতে খেলেছে; ভালো খেলেছে। তাই, সবার উচিত তাঁদের সাপোর্ট দেয়া, ভালো খেলুক বা না খেলুক একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করে দেয়া। 

নোমান মোহাম্মদ: এই মুহূর্তে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য কোনটি?

ইমরুল কায়েস: জাতীয় দলে ক্যারিয়ারটা ভালোভাবে শেষ করা।

নোমান মোহাম্মদ: জাতীয় দলে আপনি ফিরতে চান?

ইমরুল কায়েস: অবশ্যই চাই।

নোমান মোহাম্মদ: একটা ম্যাচের জন্য হলেও?

ইমরুল কায়েস: না!

নোমান মোহাম্মদ: তাহলে?

ইমরুল কায়েস: ১১/১২ বছর ধরে জাতীয় দলে খেলেছি। এই ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারে আমার ভালো-খারাপ দুটোই ছিল। এই লম্বা সময় পার করে শেষে এসে ২-১ টি ম্যাচের মধ্যে দিয়ে হাল ছেড়ে দেয়া আমার উচিত হবেনা বলে মনে হয়। তাই, একটি বিশ্বকাপ বা কিছু টেস্ট ম্যাচ খেলে সুন্দরভাবে শেষ করতে চাই।

নোমান মোহাম্মদ: মাঠে থেকে বিদায় নিতে চান। যেটি আমাদের দেশে তেমন একটি হয় না।

ইমরুল কায়েস: প্রতিটা খেলোয়াড়ই এমন চায়। সবারই স্বপ্ন থাকে যে মাঠ থেকে খেলাটা শেষ করা। সবার হয়তো এমন হয়না, কিন্তু প্রত্যেকেই এমনটি চায়। 

নোমান মোহাম্মদ: সেক্ষেত্রে ওয়ানডেতেই আপনার বাস্তবিকভাবে সুযোগ বেশি?

ইমরুল কায়েস: হ্যাঁ, আমিও তাই মনে করি। 

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Add