হাতুরাসিংহই কি সেরা?

২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

হাতুরাসিংহই কি সেরা?

পুরনো কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহকে নতুন করে ফিরিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। কেন? সাফল্যই কি এর কারণ? হাতুরাসিংহেই কি বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা কোচ? অন্যদের সঙ্গে তুলনা করলে কোন ছবিটা পাওয়া যায়?

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের শুরুর পথচলা ছিল খুব কঠিন। শুধু পরিসংখ্যান দিয়ে তাই সে সময়ের কোচদের বিবেচনা করা যাবে না। উচিতও না। এমনকি গর্ডন গ্রিনিজের কথা পর্যন্ত ধরুন। তাঁর সময়ে বাংলাদেশ প্রথম বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেয়েছে| সেখানে পাকিস্তানকে হারিয়েছে। তবুও কি এ সময়ের সঙ্গে তাঁর সময়ের তুলনা চলে? চলে না। কিংবা ধরুন এরপর দায়িত্ব নেয়া এডি বারলো। অথবা প্রথম টেস্টের কোচ সারোয়ার ইমরান। এরপর ট্রেভল চ্যাপেলের সময়। তারপর মহসিন কামালের আমল। দীর্ঘ ওই সময়টাতে পরাজয়ই ছিল যেন বাংলাদেশের অবধারিত পরিণতি। অনিবার্য নিয়তি।

সাবেক বাংলাদেশ ক্রিকেট কোচ ডেভ হোয়াটমোর।  ছবি: সংগৃহীতবাংলাদেশের ক্রিকেটে সত্যিকার অর্থে বাঁক বদলের শুরু ডেভ হোয়াটমোরের সময়ে। ২০০৩ সালের জুনে প্রধান কোচ হয়ে আসেন এই অস্ট্রেলিয়ান। তাঁর সময়েই জিম্বাবুয়ে, কেনিয়াকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। হারায় ভারত, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে। ২০০৭ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে ওঠে সুপার এইটে। সে সময়ের বাস্তবতায় এসব ছিল বিশাল অর্জন। হোয়াটমোরের সময় ইতিহাসে প্রথমবারের মতো টেস্টও তো জেতে বাংলাদেশ। এই অস্ট্রেলিয়ার কোচের অধীনে ২৭ টেস্টের এক জয় ও এক ড্র বাংলাদেশের। আর ৮৯ ওয়ানডেতে ৩৩ জয়। হোয়াটমোরের সময়টাকে তাই সফল বলতেই হবে।

এরপর জেমি সিডন্স। তাঁর সাড়ে তিন বছরের সময়ে ১৯ টেস্ট খেলে দুটিতে জয় পায় বাংলাদেশ; অ্যাওয়েতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ৮৪ ওয়ানডেতে জয় ৩১টিতে। ঘরের মাঠে ২০১১ বিশ্বকাপ ব্যর্থতায় সিডন্সের আর থাকা হয়নি| তবে সাকিব-তামিম-মুশফিকদের ব্যাটিং টেকনিক শানিত করায় তাঁর অবদান স্বীকার করেন সবাই।

২০১১ সালে সিডন্স চলে যাওয়ার পর আসেন স্টুয়ার্ট ল। তাঁর সময়ে ২০১২ এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। ওই সময়ে যা দারুণ সাফল্য। তবে বছর পেরোনোর আগেই পারিবারিক কারণে দায়িত্ব ছেড়ে চলে যান ল।

রিচার্ড পাইবাসও ছিলেন অল্প সময়। বলার মতো সাফল্য নেই। এরপর আগে থেকেই কোচিং প্যানেলে থাকা শেন জার্গেনসন হন প্রধান কোচ। বছরখানেকের মতো ছিলেন তিনি।

চন্ডিকা হাতুরাসিংহে।  ছবি: সংগৃহীতজার্গেনসেনের পরই বাংলাদেশে হাতুরাসিংহে যুগ শুরু। তাঁর আমলে বাংলাদেশ পায় স্মরণীয় সব জয়। ওয়ানডেতে ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে। ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে ওঠে। সিরিজ জেতে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। টেস্ট জেতে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, শততম টেস্টে অ্যাওয়েতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও। ২০১৪ থেকে ২০১৭- হাতুরার সাড়ে তিন বছরে ২১ টেস্টে ৬ জয় বাংলাদেশের। ড্র চার, হার ১১টিতে। সঙ্গে ৫২ ওয়ানডেতে ২৫ জয়। আর ২৯ টি-টোয়েন্টিতে ১০ জয়। দারুণ রেকর্ড, সন্দেহ নেই।

হাতুরাসিংহ চলে যাওয়ার পর আসেন স্টিভ রোডস। তাঁর সময়টা যে খুব খারাপ গেছে, তা বলা যাবে না। ৮ টেস্টে ৩ জয়, ৩০ ওয়ানডেতে ১৭ জয়, ৭ টি-টোয়েন্টিতে ৩ জয়। তবে ২০১৯ বিশ্বকাপে দল প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারায় বাংলাদেশ ক্রিকেটে শেষ হয়ে যায় রোডস-অধ্যায়।

সাবেক বাংলাদেশ ক্রিকেট কোচ রাসেল ডমিঙ্গো।  ছবি: সংগৃহীতরোডসের বিদায়ের পর রাসেল ডমিঙ্গোর নিয়োগ। ২০১৯ সালের আগস্টে দায়িত্ব নেওয়া এই দক্ষিণ আফ্রিকান কোচের অধীনে ২২ টেস্টে মাত্র ৩টিতে জেতে বাংলাদেশ। তবে এর মধ্যে আছে নিউজিল্যান্ডে গিয়ে নিউজিল্যান্ডকে হারানো। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা সাফল্য হিসেবেও অনেকে ধরেন এ্ জয়কে। এছাড়া ডমিঙ্গোর সময় ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ছিল দুর্বার। সিরিজ জিতেছে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তানের বিপক্ষে। বাছাইপর্ব পেরিয়ে ২০২৩ বিশ্বকাপ খেলা নিশ্চিত করেছে।

ডমিঙ্গোর সময়ে ওয়ানডেতে ৩০ ম্যাচে ২১ জয় বাংলাদেশের। টি-টোয়েন্টিতে ৪৬ ম্যাচে ১৯ জয়। সেই ডমিঙ্গোকে সরিয়ে আরও সাফল্যের আশায় আবার নিয়ে আসা হয়েছে হাতুরাসিংহকে। প্রথম মেয়াদে তাঁর বিপক্ষে মাঠের বাইরের নানা অসন্তোষ সত্ত্বেও।

কোচদের রেকর্ড তো জানলাম। তা থেকে কি বলা যায়, বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা কোচ হাতুরা? পরিসংখ্যান তাঁর পক্ষে আছে প্রবলভাবে। আর বিভিন্ন সময়ের প্রেক্ষাপটকে যদি বিবেচনায় নেয়া হয়, তাহলে? তাহলেও হাতুরাসিংহকে অন্তত সেরা তিনে রাখতেই হবে আপনার। বাকি দুজন? নিশ্চিতভাবেই একজন ডেভ হোয়াটমোর এবং হয়তো, হয়তো-বা আরেকজন রাসেল ডমিঙ্গো। কী বলেন আপনি?

মন্তব্য করুন: