ট্রান্সফার উইন্ডো ও ট্রান্সফার ফি

২৯ জানুয়ারি ২০২৩

ট্রান্সফার উইন্ডো ও ট্রান্সফার ফি

ট্রান্সফার উইন্ডো। শব্দটি ক্লাব ফুটবল মৌসুমের শেষ দিকে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ক্লাব পরিচালক, ক্রীড়া সাংবাদিক থেকে শুরু করে ফুটবল সমর্থকরা ট্রান্সফার উইন্ডোর দিকে নজর রাখে। প্রিয় ক্লাব কোন খেলোয়াড়কে কিনছে বা প্রিয় খেলোয়াড় মৌসুম শেষে নতুন কোন ক্লাবে নাম লেখাচ্ছে এটি জানা যায় ট্রান্সফার উইন্ডোতেই। তা এই ট্রান্সফার উইন্ডো কী? কীভাবে কাজ করে? ক্লাব ফুটবলে এর গুরুত্বই বা কতটুকু? 

প্রত্যেক বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ফুটবল ক্লাবগুলোর প্লেয়ার কেনা বা বেচার যে বৈধ প্রক্রিয়া সেটিকেই ট্রান্সফার উইন্ডো বলা হয়। গ্রীষ্ম মৌসুমকেই মূলত প্রধান ট্রান্সফার উইন্ডো বলা হয়, যার শুরু হয় জুন থেকে। ইউরোপীয় ক্লাবগুলোর ক্লাব মৌসুম শেষ হবার পর গ্রীষ্মজুড়ে প্রায় আড়াই মাস ধরে এই ট্রান্সফার উইন্ডো চলে। শীত মৌসুমে আরেকবার ট্রান্সফার উইন্ডো ওপেন হয়। শীতের এই ট্রান্সফার উইন্ডো জানুয়ারির প্রথম থেকে শুরু হয়ে একমাস পর্যন্ত ওপেন থাকে।

ক্লাব একজন খেলোয়াড়ের সঙ্গে নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্য চুক্তি করে। ওই সময় শেষ হওয়ার আগেই যদি খেলোয়াড়টি চলে যেতে চায় কিংবা ক্লাব তাকে বিক্রি করে দিতে চায়, তাহলে তাঁর জন্য একটি ফি নির্ধারণ করে বিক্রয়কারী ক্লাব। এটাই ট্রান্সফার ফি

গ্রীষ্মের ট্রান্সফার উইন্ডোতে বেশিরভাগ ক্লাব খেলোয়ারদের সাথে কৌশলগত চুক্তি করলেও কখনো কখনো শীতের ট্রান্সফার উইন্ডো অর্থাৎ জানুয়ারির উইন্ডো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে ক্লাবগুলোর জন্যে। যদিও এই জানুয়ারি উইন্ডো অনেক ক্লাব ফুটবলের মধ্যবর্তী সময়ে হয়ে থাকে তবুও ক্লাবগুলোর কাছে এটি বেশি গুরুত্ব পায় পরিস্থিতি অনুযায়ী।  একটি ক্লাব তখনি শীতকালীন ট্রান্সফার উইন্ডোতে খেলোয়াড় সাইন করায় যখন তার খুব প্রয়োজন হয়। ইনজুরিতে থাকা ফুটবলার পরিবর্তন করার জন্য অথবা টুর্নামেন্ট থেকে বাদ না পড়ার জন্য।  কখনো কখনো মৌসুমের শুরুতে ভালো করলে সেটা ধরে রাখা বা ট্রফি জয়ে এগিয়ে যাবার জন্যেও এই শীতকালীন উইন্ডো ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে ক্লাবগুলোর জন্যে।

এক ক্লাবের সাথে আরেক ক্লাবের ট্রান্সফার বিষয়ক চুক্তি এই ট্রান্সফার উইন্ডো ওপেন হবার আগে বা পরেও হতে পারে কিন্তু সেটা অফিসিয়াল হয় না। ট্রান্সফার চুক্তি যখনি হোক না কেন যতক্ষণ না ট্রান্সফার উইন্ডো ওপেন হচ্ছে ততক্ষন পর্যন্ত খেলোয়াড় তার নতুন ক্লাবে যোগ দিতে পারেন না। তবে, যে খেলোয়াড় কোন কারণে খেলার বাইরে থাকে অথবা কোন ক্লাবেই না থাকে সে বছরের যেকোনো সময়েই যেকোন ক্লাবে ট্রান্সফার সাইন করতে পারে।

এই ট্রান্সফার উইন্ডো প্রক্রিয়াতে ট্রান্সফার ফি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ট্রান্সফার ফি আসলে একটি আর্থিক ক্ষতিপূরণ। ক্লাব একজন খেলোয়াড়ের সঙ্গে নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্য চুক্তি করে। ওই সময় শেষ হওয়ার আগেই যদি খেলোয়াড়টি চলে যেতে চায় কিংবা ক্লাব তাকে বিক্রি করে দিতে চায়, তাহলে তাঁর জন্য একটি ফি নির্ধারণ করে বিক্রয়কারী ক্লাব। এটাই ট্রান্সফার ফি। ক্রয়কারি ক্লাব ও বিক্রয়কারি ক্লাবের আলোচনার ভিত্তিতে এই ট্রান্সফার ফি চূড়ান্ত করা হয়।

ট্রান্সফার ফি নির্ধারিত হবার পরও কিছু বিষয় থাকে। খেলোয়াড়কে তার ক্রয়কারি ক্লাবের সাথে কথা বলার জন্যে অনুমতি দেয়া হয় যেখানে খেলোয়াড় তার ব্যক্তিগত চুক্তি করেন। সেটি ঠিক হলেই কেবল দুটি ক্লাব খেলোয়াড়ের ট্রান্সফার নিশ্চিত করে থাকে। ট্রান্সফার ফি নিয়ে আরও কিছু বিষয় আছে। মেসি-রোনালদোর উদাহরণে তা একটু বুঝিয়ে বলি। একটা বিষয় বোঝা প্রয়োজন, ট্রান্সফার ফির আদান-প্রদান হয় ক্রয়কারী ও বিক্রয়কারী দুটি ক্লাবের মধ্যে। এখানে খেলোয়াড়ের কোনো আর্থিক লাভ নেই। যেমন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ১০০ মিলিয়ন ইউরোতে রিয়াল মাদ্রিদ থেকে জুভেন্টাসে গিয়েছিলেন। এই অর্থ জুভেন্টাস দিয়েছে রিয়ালকে। রোনালদো এখান থেকে কোনো টাকা পাননি। আবার মেসি যেমন তাঁর চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বার্সেলোনা থেকে গিয়েছিলেন পিএসজিতে। এখানে পিএসজিকে কোনো টাকা দিতে হয়নি। কারণ মেসির সঙ্গে বার্সেলোনার চুক্তির সময় শেষ হয়ে গিয়েছিল।

আবার মেসিকে কেনার জন্যও বার্সেলোনার কোনো খরচ হয়নি। যেহেতু নিজেদের একাডেমী থেকেই মূল দলে এসেছিলেন মেসি। আরেকটি উদাহরণে রোনালদোকে টানা যায়। কিছু দিন আগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে তাঁর চুক্তি বাতিল হয়েছে দুই পক্ষের সম্মতিতে। এরপর যে রোনালদো সৌদি ক্লাব আল নাসেরে যোগ দিয়েছেন, সেজন্য ম্যানইউ কোনো টাকা পায়নি। কারণ চুক্তিই তো বাতিল হয়ে গিয়েছিল।

মেসি-রোনালদো কিংবা সব ফুটবলার আলাদা চুক্তি করেন ক্লাবের সঙ্গে। নিজেদের বেতন-বোনাস এসবের চুক্তি। ট্রান্সফার ফি নয় সেটি। তবে, ফুটবলারদের দলবদল দুই ক্লাবের মধ্যে হলেও, ট্রান্সফার ফি দুই ক্লাবের মধ্যে হলেও, এখানে খেলোয়াড়ের মতামতও খুব গুরুত্বপূর্ণ। বেশিরভাগ সময়ই সর্বশেষ মতামত খেলোয়াড়ের উপর নির্ভর করে। যেহেতু চুক্তিতে তার স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক প্রয়োজন, তাই খেলোয়াড়রাই শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয় যে কোন ক্লাবের হয়ে সে খেলবে।

মন্তব্য করুন: