অ্যাডিলেইড টেস্টে ফের স্নিকো বিতর্ক

১৮ ডিসেম্বর ২০২৫

অ্যাডিলেইড টেস্টে ফের স্নিকো বিতর্ক

অ্যাডিলেইডে চলমান অ্যাশেজ সিরিজে স্নিকোমিটার প্রযুক্তি নিয়ে যেন সমালোচনা থামছেই না। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত আসায় ম্যাচ চলার সময়ই এই প্রযুক্তি বাদ দেওয়ার দাবি তুলেছেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার মিচেল স্টার্ক।

আগের দিন স্নিকো অপারেটরের ভুলে অ্যালেক্স ক্যারিকে আউট না দেওয়ার ঘটনায় বিতর্কের রেশ কাটতে না কাটতেই বৃহস্পতিবার ম্যাচের দ্বিতীয় দিন বিতর্কিত এক সিদ্ধান্তে ইংল্যান্ডের উইকেটকিপার-ব্যাটার জেইমি স্মিথকে কট বিহাইন্ড হিসেবে আউট দেওয়া হয়েছে, যেখানে রিপ্লেতে তার ব্যাটে বল স্পর্শ করার কোনো দৃশ্য দেখা যায়নি।

প্যাট কামিন্সের করা ৪৫তম ওভারের প্রথম বলে পুল করার চেষ্টা করেন স্মিথ। কিন্তু ব্যাটে বলে সংযোগ করতে পারেননি তিনি। উইকেটেকিপার ক্যারি বলটি গ্লাভসবন্দি করলে আবেদন করে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু মাঠের আম্পায়ার নীতিন মেনন আউটের সিদ্ধান্ত না দিয়ে টিভি আম্পায়ার ক্রিস গাফানিকে রিভিউ করার জন্য অনুরোধ করেন।

রিপ্লেতে বল ব্যাট স্পর্শ করার কোনো স্পষ্ট চিত্র দেখা না গেলেও, স্নিকোতে একটি ‘স্পাইক’ (বল ব্যাটে স্পর্শ করার শব্দের নির্দেশক) দেখা যায়। ক্যারি বলটি ঘাসের ঠিক ওপর থেকে গ্লাভসবন্দি করায় গাফানি মেননকে স্মিথকে আউট দেওয়ার জন্য বলেন। ক্ষুব্ধ হয়ে মাথা নাড়াতে নাড়াতে মাঠ ছাড়েন ২২ রান করা স্মিথ। অস্ট্রেলিয়ার ৩৭১ রানের জবাবে ইংল্যান্ড তখন ১৫৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল।

এর আগে স্মিথ যখন ১৬ রানে ছিলেন, তখন কামিন্সের একটি বল তার গ্লাভস ও হেলমেট স্পর্শ করে স্লিপে উসমান খাজার কাছে গেছে বলে মনে হয়েছিল। তখনও মেনন আউটের সিদ্ধান্ত না দিয়ে ক্যাচটি পরিষ্কার ছিল কি না তা দেখার জন্য গাফানির কাছে পাঠান।

কিন্তু স্নিকো ব্যবহার করে দেখা যায় বলটি গ্লাভসের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কোনো স্পাইক নেই। বল যখন হেলমেটের পাশ দিয়ে যায় তখন স্পাইক ধরা পড়ে। থার্ড আম্পায়ার সিদ্ধান্ত দেন বল গ্লাভসে লাগেনি। যদিও খাজা বলটি ঘাস ছোঁয়ার আগে ধরেছিলেন কি না, তা অস্পষ্ট ছিল।

এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ দেখা যায় অস্ট্রেলিয়া দলকে। স্টাম্প মাইক্রোফোনে ক্ষুব্ধ স্টার্কের কথা শোনা যায়। সেখানে তিনি বলেন, “স্নিকোকে বরখাস্ত করা উচিত। এটি বর্তমানে থাকা সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রযুক্তি। তারা গতকাল একটি ভুল করেছে, আজ তারা আরেকটি ভুল করেছে।

স্নিকো বিতর্কের শুরুটা হয় বুধবার ম্যাচের প্রথম দিন। ৭২ রানে ব্যাটিংয়ে থাকা অ্যালেক্স ক্যারির ব্যাটের পাশ দিয়ে বল যাওয়ার পর উইকেটকিপার স্মিথ গ্লাভসবন্দি করতেই আউটের জন্য আবেদন জানায় ইংল্যান্ড। কিন্তু তাতে সাড়া দেননি আম্পায়ার। সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নিলে দেখা যায় বল ব্যাটের কাছে আসার আগেই স্নিকোতে স্পাইক দেখা যায়। ফলে থার্ড আম্পায়ার ক্যারিকে আউট দেননি। এরপর আরও ৩৪ রান যোগ করে ১০৬ রানে আউট হন ক্যারি।

ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি করেন ক্যারিদিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে ক্যারি স্বীকার করেন, জশ টাংয়ের করা ওই ডেলিভারিটি তার ব্যাটের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি শব্দ শুনেছিলেন। আম্পায়ার আউট দিলে তিনি হয়ত রিভিউ নিতেন। কিন্তু আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নয়।

এই ঘটনায় স্নিকো সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘বিবিজি স্পোর্টস পূর্ণ দায় স্বীকার করেছে। তারা অডিও প্রসেসিংয়ের জন্য ভুল স্টাম্প (মাইক্রোফোন) নির্বাচন করাকে মানুষের ভুল হিসেবে দায়ী করেছে।

সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হওয়ায় ইংল্যান্ড একটি রিভিউ হারিয়েছিল। তবে দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরুর আগে ম্যাচ রেফারি ইংল্যান্ডকে সেটি আবার ফিরিয়ে দেন।

এসইএন রেডিওকে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান টড গ্রিনবার্গ স্নিকো প্রযুক্তির সমালোচনা করে জানান, তারা অপারেটরের কাছে এর ব্যাখ্যা চেয়েছেন যেন ভবিষ্যতে এটি আর না ঘটে।

মন্তব্য করুন: