মেলবোর্নে ১ দিনে ২০ উইকেট পতনে পিচ নিয়ে সাবেকদের সমালোচনা
২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
অ্যাশেজ সিরিজের চতুর্থ টেস্টের প্রথম দিনেই অল্প রানের ভেতর শেষ হয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস। সবুজ ঘাসের আবরনযুক্ত মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের (এমসিজি) পিচ পেসারদের জন্য অতিরিক্ত সুবিধাজনক হওয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে দুই দেশের সাবেক ক্রিকেটারদের মধ্যে।
শুক্রবার ম্যাচের প্রথম দিন অস্ট্রেলিয়া ১৫২ রানে অলআউট হওয়ার পর ইংল্যান্ডের ইনিংস গুটিয়ে যায় ১১০ রানে। একই দিন দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামা স্বাগতিকরা এক ওভার ব্যাট করে বিনা উইকেটে ৪ রান নিয়ে দিনের খেলা শেষ করেছে। স্টিভ স্মিথের দল এগিয়ে আছে ৪৬ রানে।
এমসিজির কিউরেটর ম্যাট পেজ ম্যাচের আগে আশা প্রকাশ করেছিলেন, গত বছর অস্ট্রেলিয়া-ভারতের মধ্যকার চতুর্থ টেস্টের মতো পিচ তৈরি করার, যেখানে পঞ্চম দিনের শেষ সেশনে জয় পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।
তবে এদিন রেকর্ড ৯৪ হাজার ১৯৯ জন দর্শকের সামনে পেসারদের দাপটে ব্যাটাররা যেভাবে ব্যাটাররা পরাস্ত হয়েছেন, তাতে এই টেস্ট চতুর্থ দিন পর্যন্ত গড়ানোর সম্ভাবনাও খুব ক্ষীণ।
এই ম্যাচের পিচে ১০ মিলিমিটার ঘাস রাখেন পেজ, যা গত বছরের তুলনায় ৩ মিলিমিটার বেশি। ফলে দুই দলের পেসাররাই সারাদিন পিচ থেকে ব্যাপক সিম মুভমেন্ট পেয়েছেন।
ইংল্যান্ড এই ম্যাচেও কোনো বিশেষজ্ঞ স্পিনার ছাড়াই মাঠে নেমেছে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া সম্পূর্ণ পেস-নির্ভর বোলিং আক্রমণ নিয়ে খেলছে। টসের সময় দুই দলের অধিনায়কই প্রথমে বোলিং করতে চেয়েছিলেন।

দুই দলের সাবেক খেলোয়াড়রা এই ব্যাটিং বিপর্যয়ের জন্য ব্যাটারদের আক্রমণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি বা তাদের ভুলের চেয়ে পিচকেই বেশি দায়ী করেছেন।
অস্ট্রেলিয়ার এসইএন রেডিওতে ধারাভাষ্যের সময় সাবেক ইংলিশ পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড বলেন, “যদি আমি অত্যন্ত সত্যনিষ্ঠ হয়ে বলি, তবে পিচটি অনেক বেশি সাহায্য করছে। টেস্ট ম্যাচের বোলারদের হুমকি স্বরূপ হয়ে ওঠার জন্য মুভমেন্টের এত বেশি পরিমাণের প্রয়োজন নেই। দুর্দান্ত টেস্ট ম্যাচের পিচগুলো সাধারণত বাউন্স থাকে। কিন্তু সেগুলো সব জায়গায় এভাবে নড়াচড়া করে না।”
বিবিসিকে অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি পেসার গ্লেন ম্যাকগ্রা বলেন, “এই পিচে অনেক বেশি ঘাস রয়েছে। অস্ট্রেলিয়া ভালো বোলিং করেছে। কিন্তু যেখানে পিচ অনেক কিছু করছে সেখানে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া কঠিন। কারণ আপনি যদি রক্ষণাত্মক হওয়ার চেষ্টা করেন তবে একটি বল আপনার নাম লেখা থাকবে (আউট হওয়ার জন্য)। আপনাকে এমন এক ভারসাম্য খুঁজে পেতে হবে যাতে কোনোভাবে বল বাইরে রাখা যায় এবং একই সঙ্গে রান করার দিকেও নজর রাখা যায়।”
২০১৭-১৮ মৌসুমের অ্যাশেজ টেস্টে এমসিজির পিচ ব্যাটারদের জন্য অত্যন্ত সহজ হওয়ায় তীব্র সমালোচনা হয়েছিল, যেখানে পাঁচ দিনে মাত্র ২৪টি উইকেটের পতন ঘটেছিল। এরপর থেকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পিচগুলো অনেক বেশি স্পোর্টিং করা হয়েছে।

তবে সেই ম্যাচে অপরাজিত ২৪৪ রান করা সাবেক ইংলিশ ওপেনার অ্যালিস্টার কুকের মতে, পিচের ভারসাম্য এখন বোলারদের দিকে অনেক বেশি ঝুঁকে গেছে।
“বোলারদের তাদের উইকেটের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয়নি... এটি একটি অসম প্রতিযোগিতা ছিল। আমি জানি না আপনি কীভাবে এটি (বল) মারবেন। যদি এটি আগামীকাল ফ্ল্যাট হয়ে যায় তবে ঠিক আছে।”
ফক্স ক্রিকেটে ধারাভাষ্য দেওয়া অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ফাস্ট বোলার ব্রেট লিও স্বীকার করেন বোলারদের বাড়তি সহায়তা পাওয়ার কথা।
“আমি মনে করি এতে একটু বেশিই (সাহায্য) আছে... আমি যদি একজন (বর্তমান) ফাস্ট বোলার হতাম তবে দিন শেষে অভিযোগ করতাম না।…আজ সকালে আমি উইকেটের পাশে হাত বুলিয়েছিলাম এবং আপনি অনুভব করতে পারবেন যে ঘাসগুলো উঁচু হয়ে আছে।”
চলতি সিরিজে এই দ্বিতীয়বার টেস্টের প্রথম দিনেই ২২ জন খেলোয়াড়কেই ব্যাটিংয়ে নামতে হয়েছে। এর আগে পার্থে সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে ১৯টি উইকেটের পতন হয়েছিল। সেই ম্যাচের পিচকে আইসিসি ‘ভেরি গুড’ রেটিং দিয়েছিল।















মন্তব্য করুন: