দুঃসময়ের প্রহর পেরিয়ে সৌম্য সরকারের পুনর্জন্ম

২০ ডিসেম্বর ২০২৩

দুঃসময়ের প্রহর পেরিয়ে সৌম্য সরকারের পুনর্জন্ম

দুঃসময়ের চোরাবালিতে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছিলেন সৌম্য সরকার। আঁকড়ে ধরার মতো কিছুই ছিল না। চারপাশ থেকে ভেসে আসা সমালোচনা, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ তাকে যেন আরও বেশি করে ঠেলে দিচ্ছিল অন্ধকারের গহ্বরে। কোচ, টিম ম্যানেজম্যান্ট বারবার বাড়িয়ে দিয়েছে হাত, কিন্তু আত্মবিশ্বাস হারানো সৌম্যর সেই হাত ধরার শক্তিটাও ছিল না। অবশেষে এলো নেলসনের এক সকাল। ডুবে যেতে যেতে যেন গা ঝাড়া দিলেন সৌম্য। বিধ্বংসী সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে চোরাবলির ফাঁদ থেকে মুক্ত করলেন নিজেকে।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে অমিত প্রতিভাবানদের একজন মনে করা হয় সৌম্য সরকারকে। ২০১৫ সালের পর সেই প্রতিভার সাক্ষর তিনি ধারাবাহিকভাবে দেখাতে পারেননি। মাঝেমধ্যে রান করেছেন, তারপর হারিয়ে গেছেন। সর্বশেষ ওয়ানডে সেঞ্চুরি ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। এরপর ২০২১ সালে এই নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষেই ওয়েলিংটনে শেষ ম্যাচ খেলার পর বাদ পড়েন দল থেকে। এই তিন বছরে সৌম্য ২৪টি ইনিংস খেলেছেন। যার মধ্যে পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস মাত্র ৫টি। সর্বোচ্চ করেছিলেন ৮০ রান। তবে শেষ ১৫ ইনিংসে মাত্র একটি ফিফটি করায় দলে জায়গা ধরে রাখতে পারেননি।

চলতি বছর বিশ্বকাপের আগমুহূর্তে প্রায় আড়াই বছর পর সৌম্যকে ফেরানো হয় ওয়ানডে দলে। কিন্তু আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি। দলে ফেরার পর দুটি ম্যাচেই আউট হয়েছিলেন শূন্য রানে। ডানেডিনে চলতি সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে চার বল খেলে শূন্য রানে আউট হওয়ার পর সৌম্যকে সুযোগ দেওয়া নিয়ে ফের প্রশ্ন ওঠে। এমনকী দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে প্রধান কোচ চান্ডিকা হাথুরুসিংহেও স্বীকার করে নেন, সৌম্যর ব্যর্থতার কারণ তিনি জানেন না! এরপরও সৌম্যকে সুযোগ দেওয়া হয় দ্বিতীয় ওয়ানডেতে। এবার আর ভুল করেননি সৌম্য। ব্যাট হাতে ধরা দেন রুদ্ররূপে। নেলসনের ব্যাটিং স্বর্গে ওপেনিংয়ে নেমে ভয়ডরহীন ব্যাটিংয়ে ১৫১ বলে ১৬৯ রানের রেকর্ড গড়া ইনিংস দিয়েই যেন হারিয়ে ফেলা সৌম্য সরকারকে ফিরে পায় বাংলাদেশ।

সৌম্যর এই প্রত্যাবর্তন কতদিনের জন্য- তা বলা মুশকিল। কারণ তার অতীত ধারাবাহিকতার সাক্ষ্য দেয় না। এর পেছনে টিম ম্যানেজম্যান্টের দায়ও প্রবল। সৌম্যই সম্ভবত একমাত্র ব্যাটসম্যান, যাকে ওপেনিং থেকে সাত নম্বর পজিশন পর্যন্ত ব্যাটিং করানো হয়েছে! কখনো ওপেনার, কখনো মিডল অর্ডার, কখনো লোয়ার অর্ডারের হার্ডহিটার, কখনো পেস বোলিং অল-রাউন্ডার- কতই না পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে সৌম্যকে নিয়ে! যদিও ক্রিকেট বিশ্লেষকেরা বরাবরই বলে আসছিলেন, সৌম্য টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। তার জন্য সঠিক জায়গাটি হলো ওপেনিং বা তিন নম্বর পজিশন। কিন্তু যে টিম ম্যানেজম্যান্ট বিশ্বকাপের মতো আসরে দল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে, তারা বিশেষজ্ঞদের এই মত শুনবেন কেন?

অবশেষে সৌম্যর রাজসিক প্রত্যাবর্তন ঘটল ওপেনিং দিয়েই। তানজিদ হাসান তামিমকে বসিয়ে সৌম্যকে দিয়ে ওপেনিং করানোটা ছিল ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত। ব্যাপক সমালোচিতও বটে। কিন্তু সকল সমালোচনা সামলে চান্ডিকা হাথুরুসিংহে পরপর দুই ম্যাচে সেই ঝুঁকি নিলেন। নেলসনে সৌম্য দিলেন তার প্রতিদান। খেললেন বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ, ওয়ানডেতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে এশিয়ার ব্যাটাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ইনিংস। ভেঙে গেল শচীন টেন্ডুলকারের রেকর্ড। বোলারদের ব্যর্থতায় দল হারলেও সৌম্যর হাতেই উঠল ম্যাচসেরার পুরস্কার।

সৌম্যর বয়স এখন ৩১। ৮ বছরের ক্যারিয়ারের সাত বছর ধরেই তিনি নিজেকে খুঁজে ফিরেছেন। আজ আরও একটি লাইফলাইন পেলেন সৌম্য। তিনি কি পারবেন ক্যারিয়ারের বাকি সময়টা কাজে লাগাতে?

মন্তব্য করুন: