নিউ জিল্যান্ড সাফল্যে চাপা পড়ে যাবে বিশ্বকাপ ব্যর্থতার তদন্ত?

২৩ ডিসেম্বর ২০২৩

নিউ জিল্যান্ড সাফল্যে চাপা পড়ে যাবে বিশ্বকাপ ব্যর্থতার তদন্ত?

ওয়ানডে বিশ্বকাপ ঘিরে কতই না নাটক হয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। তামিম ইকবালের অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়া, সাকিব আল হাসানের দায়িত্ব নেওয়া, বিশ্বকাপ থেকে তামিমের বাদ পড়া, দেশ ছাড়ার আগে সাকিবের বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার এবং মূল আসরে চরম ব্যর্থতা। নাটকের শেষভাগে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সেই কমিটি গঠনের প্রায় এক মাস হয়ে গেলেও তদন্ত প্রতিবেদনের কোনো খবরই নেই। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, বিসিবির অন্য তদন্ত রিপোর্টগুলোর মতো এটাও হয়তো চাপা পড়ে যাচ্ছে।

ভারতে হয়ে যাওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপে মাত্র দুটি ম্যাচ জিততে পেরেছে বাংলাদেশ। হেরেছে নেদারল্যান্ডসের মতো দলের কাছেও! টুর্নামেন্টের মাঝে অধিনায়ক সাকিব নিজেই বলেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপ এটি। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এই ব্যর্থতার পেছনে আছে সাকিব-তামিম দ্বন্দ্ব, যা বাকি খেলোয়াড়দের মনোজগতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। শিথিল হয়েছে দলীয় ঐক্য। এছাড়া কোচ চান্ডিকা হাথুরুসিংহের পরীক্ষা-নিরীক্ষা তো ছিলই। বিশ্বকাপের মাঝে ব্যাটিং অর্ডার পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেখে বিশ্ব ক্রিকেটের নামী খেলোয়াড়েরা পর্যন্ত হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন! 

সমালোচনা চরম আকার ধারণ করলে গত ২৯ নভেম্বর বিশ্বকাপ ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দেয় বিসিবি। বোর্ডের সবচেয়ে সিনিয়র পরিচালক এনায়েত হোসেন সিরাজকে চেয়ারম্যান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটিতে রাখা হয়ে দুই সিনিয়র বোর্ড পরিচালক মাহবুব আনাম ও আকরাম খানকে। এর আগে ২০২১ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চরম ভরাডুবির পরও ২ সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল বিসিবি। ওই তদন্ত কমিটিরও প্রধান ছিলেন এনায়েত হোসেন সিরাজ। কিন্তু দুই বছরেও ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। 

ক্রিকেট বিশ্লেষকদের ধারণা, এবারের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনও হয়তো অন্ধকারেই থেকে যাবে। অভিযোগের তীর যার দিকে, সেই সাকিব আল হাসানের বক্তব্যই এখন পর্যন্ত নিতে পারেনি তদন্ত কমিটি। সাকিব নির্বাচনী ব্যস্ততা এবং যুক্তরাষ্ট্রে যাতায়াত সামলে আবু ধাবি টি-টেন লিগে তার দলকে উৎসাহ দিতে যান, কিন্তু তদন্ত কমিটিকে দেওয়ার সময় তার নেই। আবার অনেকের ধারণা, তদন্ত কমিটিই হয়তো সাকিবকে ডাকতে সংকোচ বোধ করে। তাই ২৫ দিন হয়ে গেলেও তদন্ত প্রতিবেদনের কোনো খবর জানা যায় না। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে সাকিব নিজেও বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে হয়তো তিনি তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হতে পারবেন না। 

তদন্তকাজে ধীরগতির সঙ্গে এবার যুক্ত হলো নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে জয়ের সাফল্য। সাকিব-তামিম ছাড়াই নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বে ২৩ ডিসেম্বর শনিবার এই ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ। এই জয়ে আগেই সিরিজ হেরে বসার গ্লানি অনেকটাই চাপা পড়ে গেছে। ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা আশংকা করছেন, হয়তো এই জয়ের আনন্দে চাপা পড়ে যাবে বিশ্বকাপ ব্যর্থতার তদন্ত প্রতিবেদনও। তাছাড়া সম্প্রতি বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স প্রধান জালাল ইউনুস বলেছেন, সাকিবই তিন ফরম্যাটের অধিনায়ক আছেন। এর থেকেই অনুমান করা যায় বিসিবির মনোভাব।

বাংলাদেশের ক্রিকেট আসলে বছরের পর বছর এভাবেই চলছে। হুটহাট কিছু খুচরো সাফল্য এসে ভুলিয়ে দেয় বড় ব্যর্থতা। কার্যকারণ খোঁজা হয় না। চাপা পড়ে যায় অনেককিছুই। যে কারণে টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার ২৩ বছরেও বাংলাদেশ পেশাদার দল হয়ে উঠতে পারেনি। আঞ্চলিক কিংবা বৈশ্বিক মঞ্চে এখনও শিরোপা জিততে পারেনি। এবারও হয়তো নিউ জিল্যান্ডে পাওয়া সাফল্য ভুলিয়ে দেবে বিশ্বকাপ ব্যর্থতা। অথচ, এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দুর্দান্ত পারফর্মেন্সই ছিল সবার স্বপ্ন।

মন্তব্য করুন: