অ্যাশেজের চেয়েও ভারত জয় কঠিন!

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

অ্যাশেজের চেয়েও ভারত জয় কঠিন!

ভারত-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে চলছে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির লড়াই। ভারতে। তা ভারতে এসে স্বাগতিকদের হারানো তো চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। বিশেষত টেস্টে। আর সিরিজ জয়? সেটিকে অ্যাশেজ জয়ের চেয়েও বড় অর্জন হিসেবে দেখছেন অস্ট্রেলিয়ানরা।

স্টিভেন স্মিথ তা বলেছেন সরাসরি। ডেভিড ওয়ার্নার, মিচেল স্টার্কদের কথাতেও একই সুর। আর অধিনায়ক প্যাট কামিন্স তো ভারতে সিরিজ জয়কে অস্ট্রেলিয়ার জন্য ‘যুগান্তকারী’ হিসেবে দেখছেন। অবশ্য শুধু অস্ট্রেলিয়া নয়, যে কোনো দলের জন্যই ভারতের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয়কে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়। কেন? কারণগুলো কী? চলুন জেনে আসা যাক –

ভারতের স্পিন : ভারতে টেস্ট উইকেট হয় সাধারণত স্পিন সহায়ক। ঘরের মাঠে এর পরিপূর্ণ ফায়দা তুলে নিতে পারেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজার মত স্পিনাররা। ভারতে টেস্ট খেলতে এলে তাই চরম পরীক্ষার মুখে পড়েন প্রতিপক্ষ ব্যাটাররা। গত এক দশকে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ প্রায় সব দলকেই ঘরের মাঠে নাকানিচুবানি খাইয়েছেন ভারতের স্পিনাররা। এই চ্যালেঞ্জ জেতা যে কোনো ব্যাটসম্যানের জন্যই তাই বড় অর্জন হিসেবে দেখা হয়।

রবিচন্দ্রন অশ্বিন।  ছবি: সংগৃহীতশক্তিশালী ভারসাম্যপূর্ণ দল : গত এক দশকে ভারত তৈরী করছে অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার। এসব ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে সেরা খেলোয়াড়রাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব করেন দেশের হয়ে। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, চেতেশ্বর পূজারার মত ব্যাটসম্যানদের যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন অজিঙ্কা রাহানে, শিখর ধাওয়ানের মত ব্যাটসম্যান। আবার জাদেজা, অশ্বিন, হার্দিক পাণ্ডিয়ার মত সময়ের সেরা অলরাউন্ডারও আছে ভারতের। 

অন্য দিকে বোলিংয়েও ঈর্ষণীয় সাফল্য গত এক দশকে। ইশান্ত শর্মা, ভুবনেশ্বর কুমার, মোহাম্মদ শামির মত বোলারদের সাথে যোগ হয়েছেন মোহাম্মদ সিরাজ। আবার অশ্বিনের নেতৃত্বে স্পিন আক্রমণ তো আছেই। প্রতিভা আর দক্ষতার মিশেলে তৈরি এমন খোলায়াড়দের কারণেই ঘরের মাঠে ভারতকে হারানো কঠিন হয়ে পড়েছে যে কোন দলের জন্য।

কন্ডিশন : ক্রিকেট খেলায় অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করে কন্ডিশন। যে দেশে খেলা হয়, সে দেশের খেলোয়াড়রা বাড়তি কিছু সুবিধা পান। পিচ এবং মাঠ সম্পর্কে ভালো জানা, আবহাওয়ার সাথে মানিয়ে নেয়া, সমর্থন - সব দিক থেকেই। আর ভারতে খেলতে আসা বেশিরভাগ দলই আসে শীতপ্রধান অঞ্চল থেকে। তাই ভারতের মত গ্রীষ্ম প্রধান আবহাওয়ায় ক্রিকেটের বাইরেও নিজেদের লড়তে হয় মানিয়ে নিতে।

সমর্থন : স্বাগতিক দল দর্শক সমর্থনে এগিয়ে থাকে, এটা তো জানা কথা। কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে এটা যেন আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে। অন্যান্য বেশিরভোগ ক্রিকেট খেলুড়ে দেশে ক্রিকেট জনপ্রিয় হলেও প্রধান খেলা নয়। আর ভারতের মানুষ ক্রিকেটের নামে হাঁসে-কাঁদে। তাই ভারতের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে খেলতে গেলে বিপক্ষ দলকে খেলতে হয় ভারতের অগণিত সমর্থক ও তাদের উজাড় করে দেয়া সমর্থনের বিপক্ষেও।

ঘরের মাঠে ভারতকে টেস্টে পরাজিত করা যেকোন দলের জন্যেই একটি বড় চ্যালেঞ্জ।  ছবি: সংগৃহীতরেকর্ড-পরিসংখ্যান : ভারতের মাটিতে সাম্প্রতিক সময়ের পরিসংখ্যান দেখা যাক। ২০১০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এখানে টেস্ট সিরিজ হয়েছে মোট ২২টি। এই ২২ সিরিজে শুধুমাত্র ২০১৩ সালে একটি সিরিজ হেরেছে ভারত। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪ ম্যাচ সিরিজটি তারা হারে ২-১ ব্যবধানে। বাকি ২১ সিরিজের ২০টি তেই জয়ী হয়েছে ভারত; ১টি সিরিজ ড্র করে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে; ২০১০ সালে। ২০১৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই হারের পর এখনও অব্দি ঘরের মাঠে টানা ১৫টি টেস্ট সিরিজই জিতেছে ভারত। খেলেছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে। এই রেকর্ডটাই তো ভারতের সবচেয়ে বড় শক্তি।

অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা তাই কেন ভারতের মাটিতে সিরিজ জয়কে যে অ্যাশেজ জয়ের চেয়েও বড় হিসেবে দেখছেন, বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই।

মন্তব্য করুন: