স্টার্কের কীর্তি, উইন্ডিজের লজ্জা

১৫ জুলাই ২০২৫

স্টার্কের কীর্তি, উইন্ডিজের লজ্জা

আগের দিনের খেলা শেষে শামার জোসেফ জানিয়েছিলেন, দুইশর আশেপাশে লক্ষ্য পেলে তা তাড়া করতে পারবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তৃতীয় দিনের শুরুতে অস্ট্রেলিয়াকে দ্রুত গুটিয়ে দিয়ে ২০৪ রানের লক্ষ্যও পেয়েছিল তারা। কিন্তু এরপর যা ঘটেছে তা রীতিমতো অবিশ্বাস্য! মিচেল স্টার্কের রেকর্ড গড়া বোলিং স্কট বোল্যান্ডের হ্যাটট্রিকে ক্যারিবিয়ানরা গুটিয়ে গেছে টেস্ট ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহে। স্টার্কের কীর্তি স্বাগতিকদের এমন অবিশ্বাস্য ব্যাটিং ধসে ওলটপালট হয়েছে রেকর্ড বইয়ের পাতাও।

চতুর্থ ইনিংসের সর্বনিম্ন রান: সোমবার জ্যামাইকায় দিবা-রাত্রির টেস্টের তৃতীয় দিন দ্বিতীয় সেশনের শুরুতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গুটিয়ে যায় মাত্র ২৭ রানে, যা চতুর্থ ইনিংসের ইতিহাসে সর্বনিম্ন। সব ইনিংস মিলিয়ে টেস্টের ১৪৮ বছরের ইতিহাসে এর চেয়েও কম রানে অলআউট হওয়ার ঘটনা আছে কেবল একবার। ১৯৫৫ সালে অকল্যান্ডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ২৬ রানে অলআউট হয়েছিল নিউ জিল্যান্ড।

৮৭ বলে অলআউট: ক্যারিবিয়ানদের ইনিংসের স্থায়িত্ব ছিল মোটে ১৪ ওভার বল, যা টেস্ট ইতিহাসে অলআউট হওয়া তৃতীয় স্বল্প দৈর্ঘ্যের ইনিংস। এই তালিকায় সবার ওপরে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৯২৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১২ ওভার বলে তারা ৩০ রানে অলআউট হয়েছিল। আর গত বছর নভেম্বরে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ১৩ ওভার বলে ৪২ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা।

সাত জনের ডাক: পুরো ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন ব্যাটার রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরের পথ দেখেন। এক ইনিংসে এরচেয়ে বেশি ডাক মারার ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। এতদিন এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি শূন্য রানে আউট রেকর্ড ছিল ৬টি। মোট নয়বার এই ঘটনা ঘটেছে।

১৫ বলে উইকেট: ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং-অর্ডার গুড়িয়ে দেওয়ার মূল কারিগর ছিলেন স্টার্ক। প্রথম ওভারে উইকেট নেওয়া বাঁহাতি এই পেসার তার পঞ্চম শিকারটি ধরেন ১৫তম বলে। টেস্ট ইতিহাসে এর চেয়ে দ্রুত উইকেট নেওয়ার রেকর্ড আর কারোর নেই।

এর আগে সবচেয়ে কম ১৯ বলে ইনিংসে উইকেট নেওয়া কীর্তি ছিল তিন জনের। তারা হলেন, ১৯৪৭ সালে ব্রিসবেনে ভারতের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার আর্নি টোশ্যাক, ২০১৫ সালে নটিংহ্যামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের স্টুয়ার্ট ব্রড এবং ২০২১ সালে মেলবোর্নে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার স্কট বোল্যান্ড।

২০০২ সালের পর দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ইনিংসের প্রথম ওভারে উইকেট শিকার করেন স্টার্ক। তার আগে ২০০৬ সালে করাচি টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওভারে হ্যাটট্রিক করেছিলেন ভারতের ইরফান পাঠান।

ওয়াসিম আকরামের পর দ্বিতীয় বাঁহাতি পেসার হিসেবে টেস্টে ৪০০ উইকেটের মালিক স্টার্ক৪০০ উইকেটের ক্লাবে: নিজের শততম টেস্ট খেলতে নেমে আরও এক মাইলফলক স্পর্শ করেছেন স্টার্ক। অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসের চতুর্থ বোলার হিসেবে টেস্ট ৪০০ উইকেট নিয়েছেন তিনি। তার আগে এই তালিকায় নাম লেখান শেন ওয়ার্ন, গ্লেন ম্যাকগ্রা ন্যাথান লায়ন।

মিকাইল লুইকে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলে বলের হিসেবে দ্বিতীয় দ্রুততম বোলার হিসেবে টেস্টে ৪০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন স্টার্ক। এই কীর্তি গড়তে বাঁহাতি এই পেসার ১৯ হাজার ৬২টি বল করেন। তার ওপরে আছেন ১৬ হাজার ৬৩৪ বলে ৪০০তম উইকেট নেওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার ডেইল স্টেইন।

বোল্যান্ডের হ্যাটট্রিক: এদিন নিজের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম তিন বলে তিন উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার দশম বোলার হিসেবে টেস্টে হ্যাটট্রিক করেন বোল্যান্ড। দেশটির হয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে সবশেষ হ্যাটট্রিকটি করেন পিটার সিডল, ২০১০ সালে ব্রিসবেনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।

১৯১০ সালের পর দুদলই দুবার অলআউট হয়েছে এমন টেস্টে চার ইনিংস মিলিয়ে সবচেয়ে কম রানের এবং সবচেয়ে কম বল করার রেকর্ড হয়েছে এই ম্যাচে। চার ইনিংস মিলিয়ে মোটে ৫১৬ রান হয়েছে, আর বল করা হয়েছে হাজার ৪৫টি।

মন্তব্য করুন: