মায়ামিতে মানিয়ে নিয়েছেন মেসি

১৯ আগস্ট ২০২৩

মায়ামিতে মানিয়ে নিয়েছেন মেসি

পিএসজির সাথে লিওনেল মেসির চুক্তি শেষ হওয়ায় এই মৌসুমে প্যারিস ছাড়বেন কথা অনেক আগে থেকেই বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছিল। প্রথমে তার শৈশবের ক্লাব বার্সেলোনা এরপর সৌদি ক্লাব আল-হিলালে যোগ দেওয়া নিয়ে গুঞ্জন চলছিল। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে গত ১৫ই জুন মেজর লিগ সকার (এমএলএস) ক্লাব ইন্টার মায়ামির পক্ষ থেকে ঘোষণা আসে তাদের ক্লাবে যোগ দিচ্ছেন এই ফুটবল জাদুকর।

ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেওয়ার পাঁচ সপ্তাহ পর অবশেষে গণমাধ্যমের সামনে এলেন বিশ্বকাপ জয়ী আর্জেন্টাইন মহাতারকা মেসি।

মায়ামি হেরাল্ডকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে মেসি কথা বলেছেন ইন্টার মায়ামিতে আসা, মারভেল সুপারহিরোদের মতো গোল উৎযাপন, দক্ষিণ ফ্লোরিডার আবহাওয়া, রাস্তার যানজট নিয়ে।

প্রশ্ন: ফুটবল বিশ্বে আপনার জার্সি সবথেকে কাঙ্ক্ষিত বস্তুগুলোর একটি। ম্যাচ শেষে কোন খেলোয়াড়ের সঙ্গে আপনি জার্সি পরিবর্তন করবেন এটা কীভাবে ঠিক করেন? এটা কি সত্য যে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা প্রাধান্য পায়? এবং আপনি যেই জার্সিগুলো সংগ্রহ করেন সেগুলো কী করেন?

মেসি: সাধারণত ওই মুহূর্তে যিনি আমার সামনে থাকেন তার সঙ্গেই আমি জার্সি পরিবর্তন করি। আমি এমন দলগুলোর বিপক্ষে খেলার সুযোগ পেয়েছি যেখানে আর্জেন্টাইন খেলোয়াড় ছিল, সেখানে আমরা নিজেদের মধ্যেই জার্সি পরিবর্তন করে নিতাম। আমি কিন্তু ইউরোপের খেলোয়াড়দের সঙ্গেও জার্সি পরিবর্তন করেছি। যেসব খেলোয়াড়কে আমি আগে থেকেই চিনতাম কিংবা যারা আমার বন্ধু, ম্যাচ শেষে তাদের সঙ্গে জার্সি পরিবর্তন করা সবসময়ই ভালো। যে জার্সিগুলো আমি নিয়েছি এবং আমার জীবনের সব গুরুত্বপূর্ণ স্মারকচিহ্নগুলো আমার বার্সেলোনার বাড়িতে সংরক্ষণ করে রেখেছি।

প্রশ্ন: এখানে আসার আগে আপনি কি আপনার সতীর্থ সাবেক ইন্টার মায়ামি আর্জেন্টাইন তারকা গনসালো হিগুয়াইনের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন কি? তিনি আপনাকে কী উপদেশ দিয়েছিলেন?

মেসি: বিশ্বকাপ শুরুর আগে আমিএল পিপা” (হিগুয়াইনের) - এর সঙ্গে কথা বলেছিলাম এবং আমরা একে-অপরের যোগাযোগ রেখেছিলাম। কিন্তু এমএলএসে আসার বিষয়ে কিংবা এখানে থাকা নিয়ে আমরা কোনো কথা বলিনি। কারণ আমি তখনও এই সিদ্ধান্ত নেইনি। এখানে আসার পর আমি ওর সঙ্গে কথা বলেছিলাম এবং সে আমাকে লিগ ক্লাবের বিষয়ে অনেক কিছু জানায়। আমরা সবসময় একজন আরেকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। আমরা বন্ধু এবং আমাদের মধ্যে অনেক ভালো সম্পর্ক আছে।

পরিবারের সঙ্গে আমেরিকায় আনন্দেই আছেন মেসিপ্রশ্ন: মায়ামিতে গাড়ি চালাতে কেমন লাগছে আপনার এবং দক্ষিণ ফ্লোরিডার সাথে বুয়েনস আইরেস, বার্সেলোনা প্যারিসের ট্র্যাফিকের পার্থক্য কিরকম

মেসি: বড় শহরগুলোতে সবসময় অনেক ট্র্যাফিক থাকে। প্যারিসের বেলাতেও তাই। বুয়েনস আইরেস এবং বার্সেলোনাতেও একই চিত্র। বিষয়ে আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে এবং শান্ত থাকতে হবে। একই সাথে বাড়ি থেকেও একটু আগে বের হতে হবে যেন আপনি সময়ের মধ্যে আপনার গন্তব্যে যেতে পারেন।

প্রশ্ন: আপনার মারভেল সুপারহিরোদের মতো গোল উদযাপনের শুরুটা কীভাবে?

মেসি: আমার তিন ছেলে এখনো ছুটিতে আছে। তাদের স্কুল এখনো শুরু হয়নি। তাই প্রতি রাতে আমরা মারভেলের সুপারহিরো সিনেমাগুলো দেখি। মূলত তারাই এই বুদ্ধি নিয়ে এসেছে। তারা আমাকে বলে রেখেছে, যখনই আমার খেলা থাকবে এবং আমি গোল করবো, আমি যেন মারভেল সুপারহিরোদের মতো উদযাপন করি। এভাবেই এটি শুরু হয়েছে এবং আমরা এই ধারা ধরে রেখেছি। প্রত্যেকবার আমরা নতুন সিনেমা দেখি এবং সঙ্গে সঙ্গে আমরা গোলের উদযাপন অনুশীলন করি। তবে ঘরের মাঠের ম্যাচগুলোতে যখন আমার বাচ্চারা মাঠে আসে, আমার কাছে থাকে তখনই আমি শুধু এই উদযাপনগুলো করি। আমরা একসাথে ওই মুহূর্তগুলো ভাগাভাগি করতে চাই। যখন আমি ওদের গ্যালারিতে দেখি, এগুলো আমি তখন তাদের জন্য করি।

প্রশ্ন: ক্লাবে আসার আগে আপনি মায়ামিতে কতবার অবকাশযাপনে এসেছিলেন? এবং প্রথম কবে আপনি এই শহরে বেড়াতে আসেন?

মেসি: আমি বেশ কয়েকবার মায়ামিতে এসেছিলাম। প্রথম কবে এসেছিলাম তা পুরোপুরি মনে নেই কিন্তু আমার মনে হয় সেটি কোনো ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলতে। এছাড়াও আমি আমার পরিবারের সঙ্গে এখানে এসেছিলাম।

প্রশ্ন: আপনি অবশ্যই জানতেন দক্ষিণ ফ্লোরিডায় লাতিন আমেরিকার একটি বড় জনগোষ্ঠী বাস করে। কিন্তু এই জনগোষ্ঠী যে এত হিস্পানিক এটি কী আপনাকে কোনোভাবে অবাক করেছে?

মেসি: এটি আমার কাছে মোটেও অবাক করার মতো বিষয় নয়, আমি আগেও এখানে এসেছিলাম। আমি জানতাম এখানে কেমন হতে পারে। এখানে অনেক লাতিন আমেরিকানরা থাকেন এবং তাদের মধ্যে বাস করতে পারাটা আমার জন্য সুন্দর একটি বিষয়। সমর্থকদের সঙ্গে খেলা উপভোগ করতে পারাটা এর মধ্যে একটি। তারা স্টেডিয়াম পূর্ণ করে রাখে। আমরা যারা লাতিন, আমরা আমাদের ভালোবাসার জিনিসের প্রতি অনেক উন্মত্ত নিবেদিত থাকি। এবং এটিকে আমাদের প্রতিদিনের জীবনের অংশ হিসেবে দেখি। আমার তো এখানে নিজের বাড়ির মতো মনে হয়।

আমেরিকার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার মধ্যে আছেন মেসিপ্রশ্ন: এখানকার আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে কীরকম লাগছে? আপনাকে কৃত্রিম ঘাসেও খেলতে হতে পারে এটির সাথে কীভাবে মানিয়ে নিচ্ছেন

মেসি: এখানে প্রচণ্ড গরম এবং আর্দ্রতাও বেশি। কিন্তু সত্যি বলতে খাপ খাইয়ে নিতে বেশি সময় লাগেনি। আমার কাছে এটি এখন অনেক স্বস্তিদায়ক হয়ে উঠেছে। আমার বন্ধুরা যারা এখানে তাদের সারাটা জীবন কাটিয়েছে তাদের সাথে কথা বলেছি এমনকি তারা এখনো এই আবহাওয়া সহ্য করতে পারে না, মানিয়ে নিতে পারে না। কৃত্তিম ঘাসের বিষয়ে বলতে গেলে ছোটবেলায় আমি এগুলোতে খেলেছি। লম্বা সময় পর আমি এগুলোতে আবার খেলছি। কিন্তু আমার এই ধরণের মাঠে খেলতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

প্রশ্ন: লিগ এবং আমেরিকায় জীবনকে কীভাবে মানিয়ে নিচ্ছেন?

মেসি: এই শহরের মানুষ এবং এই ক্লাব এখানে আমাদের মানিয়ে নেওয়াটা সহজ করে দিয়েছে। সমর্থকরা, প্রতিদিন রাস্তায় আমি যেসব মানুষের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছি এটি সত্যি একটি অসাধারণ শহর এবং কারণে আমি আনন্দিত। আমরা এখনো পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার মধ্যে আছি। আমরা এখনো বাড়ি কিনিনি। বাচ্চারাও দ্রুত স্কুলে যাওয়া শুরু করবে। আমি মনে করি এগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে। আমরা যেমনটা ভেবেছিলাম এটি তার চেয়েও সহজ। বার্সেলোনা থেকে প্যারিসে যাওয়াটা আমাদের জন্য কিছুটা কঠিন ছিল। সে তুলনায় এখানে অনেক সহজই হয়েছে।

প্রশ্ন: ইন্টার মায়ামিতে আসার সিদ্ধান্ত কীভাবে নিয়েছেন?

মেসি: আমার স্ত্রী বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে এটি একটি পারিবারিক সিদ্ধান্ত ছিল। এবং আমি আজ আপনাকে বলতে পারি আমরা যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাতে আমি অনেক খুশি। এটি আমি শুধু আমার খেলাধুলার দিক থেকে বলছি না, আমার পরিবার প্রতিদিন যেভাবে কাটাচ্ছে আমি সেদিক বিবেচনা করেও বলছি। এই শহর আমাদের দুহাত খুলে স্বাগত জানিয়েছে এবং আমরা এখানে ভালোই উপভোগ করছি। শুধু যে মায়ামিতে তা কিন্তু নয়, সেদিন আমরা ডালাসে খেলতে গিয়েছিলাম, সেখানের মানুষজনেরও আতিথিয়তা আমায় মুগ্ধ করেছে। এসব মুহূর্তের জন্য আমি কৃতজ্ঞ খুশি। কারণ যে খেলাকে আমি আমার সারাটি জীবন ভালোবেসে এসেছি সে খেলাকে আমি উপভোগ করতে পারছি।

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Add