ফুটবলে এবার সাদা কার্ড

৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ফুটবলে এবার সাদা কার্ড

ফুটবল দুনিয়ায় নতুন সংযোজন। নতুন ইতিহাস। হলুদ কার্ড, লাল কার্ড তো ফুটবলের নিয়মিত চরিত্র। রেফারিদের হাতের রঙের সে খেলায় এবার যোগ হলো সাদা। ফুটবলে প্রথমবার দেখানো হয়েছে সাদা কার্ড। নতুন এই কার্ড কেন? হলুদ কিংবা লাল কার্ডের শুরুটাই-বা কীভাবে?

হলুদ ও লাল কার্ড ছাড়া এখনকার ফুটবল চিন্তাই করা যায় না। এর শুরুটা কীভাবে? সে ইতিহাসের জন্য ফিরে যেতে হবে ১৯৬৬ বিশ্বকাপে। আর্জেন্টিনা-ইংল্যান্ড কোয়ার্টার ফাইনাল। রেফারি পশ্চিম জার্মানির রুডল্ফ ক্রেইটলিন। তিনি ম্যাচের শুরু থেকেই ইংল্যান্ডের পক্ষে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ আর্জেন্টিনার। এরই মধ্যে ফাউল করার জন্য আর্জেন্টিনার অধিনায়ক আন্তনিও রাতিনকে একবার সতর্ক করেন। কিছুক্ষণ পর রেফারির আরেক সিদ্ধান্তে প্রতিবাদ জানান রাতিন। ক্রেইটলিন আঙ্গুল উঁচিয়ে আর্জেন্টাইন অধিনায়ককে মাঠ থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন।

পশ্চিম জার্মান রেফারি রুডল্ফ ক্রেইটলিন।  ছবি: সংগৃহীতহতভম্ব রাতিন বুঝতে পারছিলেন না তাঁর অপরাধ কী? কারণ রেফারির ভাষা জার্মান; আর্জেন্টাইন অধিনায়কের ভাষা স্প্যানিশ। কেউ কারও কথা বুঝতে পারছিলেন না। রাতিন বার বার চাইছিলেন যেন একজন অনুবাদক এসে রেফারির এই বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেবার কারণটা বুঝিয়ে দেন। এজন্য মিনিট দশেক খেলা বন্ধ ছিল। আর ওয়েম্বলির দর্শকরাও বুঝতে পারছিলেন না, ঘটনা কী ঘটছে। কারণ তখন যেহেতু কার্ড ছিল না, রেফারির ভাষাই ছিল সিদ্ধান্ত জানানোর একমাত্র উপায়।

রাতিনের এই ঘটনার মতো আরও কিছু ঘটনা ঘটছিল। যেমন ওই ম্যাচেই ইংল্যান্ডের জ্যাক চার্লটনকেও রেফারি সতর্ক করেছিলেন; অথচ তিনি নাকি সেটি জেনেছিলেন পরের দিনের পেপার পড়ে। তাহলে এমন সমস্যার সমাধান কী?

১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে হলুদ ও লাল কার্ডের ব্যবহার শুরু।  ছবি: সংগৃহীত১৯৬৬ বিশ্বকাপের রেফারি কমিটির সদস্য কেন অ্যাস্টনের মাথায় হঠাৎ এক বুদ্ধি এল; সেটাও ট্রাফিক লাইট দেখে। লন্ডনের রাস্তায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন। লাল আলো জ্বললে গাড়ি থামে, আর হলুদ জ্বললে অপেক্ষায় থাকতে হয়। সেটিই ফুটবলে কার্ড হিসেবে উপস্থাপনের প্রস্তাব করেন তিনি - ‘হলুদ কার্ডে সতর্ক হও, লাল কার্ডে মাঠ ছাড়ো’। ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে এই দুই কার্ডের ব্যবহার শুরু।

সবুজ কার্ডও কিন্তু আছে ফুটবলে! এটা হলুদ ও লাল কার্ডের মাঝামাঝি শাস্তি। কেউ সবুজ কার্ড দেখলে তাৎক্ষণিক মাঠ ছাড়তে হবে। তবে বদলি খেলোয়াড়ের কোটা শেষ না হলে, ওই খেলোয়াড় অন্য কারও বদলি হিসেবে আবার মাঠে নামতে পারবেন। অবশ্য প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে সবুজ কার্ডের ব্যবহার এখনও অনুমোদিত নয়।

আর সাদা কার্ডের ব্যাপারটা কী? এর সংযোজন ফেয়ার প্লে ও খেলোয়াড়সুলভ মানসিকতার স্বীকৃতি হিসেবে। শুরুটা পর্তুগালে। কোন খেলোয়াড়কে দেখানো হয়েছে এই কার্ড? এখানেই চমক। খেলোয়াড় নয়, মেডিক্যাল স্টাফদের দেখানো হয়েছে সাদা কার্ড!

সাদা কার্ড ফেয়ার প্লে ও খেলোয়াড়সুলভ মানসিকতার প্রতীক।  ছবি: সংগৃহীতনারীদের বেনফিকা-স্পোর্তিং লিসবনের ম্যাচের সময় গ্যালারিতে এক দর্শক হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। দুই দলের মেডিক্যাল সদস্যরা দ্রুত চিকিৎসা দিতে গিয়েছিলেন। তাঁদের তৎপরতায় ফুটবলীয় চেতনা ফুটে উঠেছে। সেটিরই স্বীকৃতি হিসেবে রেফারি সাদা কার্ড দেখিয়ে অভিবাদন জানিয়েছেন মেডিক্যাল সদস্যদের। এর আগেও পর্তুগিজ ফুটবলে সাদা কার্ড দেখা গিয়েছিল, সেটি ছিল প্রদর্শনী ম্যাচ। অবশ্য প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে সবুজ কার্ডের মতো সাদা কার্ডের ব্যবহারও এখন পর্যন্ত অনুমোদিত নয়।

তবে এটা তো ঠিক, লাল, হলুদ, সবুজ সব কার্ডই শাস্তির প্রতীক। আর সাদা কার্ড ফেয়ার প্লে ও খেলোয়াড়সুলভ মানসিকতার প্রতীক। পার্থক্য তো আছেই!

মন্তব্য করুন: