সাকিব-তামিমের ব্যক্তিগত বিরোধ তাদের মাঝেই থাকুক

২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

সাকিব-তামিমের ব্যক্তিগত বিরোধ তাদের মাঝেই থাকুক

অস্ট্রেলিয়ার দুই কিংবদন্তি স্টিভ ওয়াহ-শেন ওয়ার্ন কেউ কাউকে দুচোখে দেখতে পারতেন না। স্পষ্ট করে বললে, তারা একই দলে খেললেও ছিলেন একে অন্যের শত্রু। এমনকী স্টিভের সঙ্গে তার ভাই মার্ক ওয়াহর সম্পর্কও ভালো ছিল না বলে শোনা যায়। ভারতে দিনেশ কার্তিকের স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করেছিলেন তারই জাতীয় দলের সতীর্থ মুরালি বিজয়! সতীর্থদের মাঝে বিরোধ থাকা অস্বাভাবিক কিছু না। ক্রিকেট ইতিহাসে এমন উদাহরণ ভুরি ভুরি। কিন্তু বাংলাদেশে সাকিব-তামিমকে ঘিরে যা হচ্ছে, সেটা সবকিছুইকেই যেন ছাড়িয়ে গেছে।

দেশের দুই ক্রিকেট সুপারস্টারের ব্যক্তিগত বিরোধের রেশ ছড়িয়ে পড়েছে ক্রিকেট মাঠে। দুজনেরই বিপুল সংখ্যক ভক্তকুল আছে। তাই ক্রিকেট মাঠে তামিমকে দেখলে অন্যপক্ষ যেমন ভুয়া ভুয়া বলে চিৎকার করে, সাকিবের ক্ষেত্রেও ঠিক একই কাজ করেন তামিমের অনুসারীরা। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে শুরু হয়েছিল সাকিবকে দুয়োধ্বনি দেওয়া, যা এখনও চলছে। চোখের সমস্যা কাটিয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করে গেলেও সাকিব রেহাই পাননি দুয়ো থেকে। সাকিবের অনুসারীরাই বসে থাকবেন কেন? তারা চলতি বিপিএলে টার্গেট করেছেন তামিমকে।

সর্বশেষ বিপিএলের লিগ পর্বের একটি ম্যাচে তামিমকে আউট করে ইঙ্গিতপূর্ণ উদযাপন করেছিলেন সাকিব। এরপর সাকিব যখন আউট হলেন, তামিম তখন তার সেই উদযাপন নকল করে ব্যাঙ্গ করেন। যদিও মাঠের খেলায় প্রতিপক্ষ ক্রিকেটারকে আউট করার পর ইঙ্গিতপূর্ণ উদযাপন হরহামেশাই দেখা যায়, কিন্তু এক্ষেত্রে জড়িতদের নাম সাকিব-তামিম হওয়ায় তাদের বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক নতুন মাত্রা পায়। দর্শকরাও দ্বিগুণ উৎসাহে ভুয়া ভুয়া চিৎকারে মেতে ওঠেন, যা দেশের ক্রিকেটের জন্য মোটেও শুভ নয়। বিরোধাত্মক এই সংস্কৃতি এখনই বন্ধ করা উচিত বলে মনে করছেন সচেতনমহল। কিন্তু কে শোনে কার কথা?

সোমবার মিরপুর শের-ই-বাংলায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচের শেষদিকে সীমানায় ফিল্ডিং করছিলেন সাকিব। পুরো সময়টাই তাকে দর্শকদের অকথ্য গালাগাল আর দুয়ো শুনতে হয়েছে! এর আগে একটি ম্যাচে তো সহ্য করতে না পেরে ব্যাট দিয়ে দর্শকদের উদ্দেশ্যে অশালীন ইঙ্গিত করেছিলেন সাকিব। যদিও সেটা বড় কোনো ইস্যু হয়ে ওঠেনি। এটা অনেকেই হয়তো ভুলে যায় যে, সাকিব-তামিমরাও মানুষ। তাদেরও সহনশীলতার সীমা আছে। ধৈর্যের বাধ ভাঙলে তাদেরকেই পেতে হয় আচরণবিধি ভঙ্গের শাস্তি।

এই দুজনের বিরোধের খবর বেশ পুরনো। সাংবাদিকরা প্রায় সবাই জানলেও কেউ সেভাবে প্রকাশ করেননি। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিরোধের খবর ফাঁস না করলে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যেতই না। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের দল থেকে তামিমকে বাদ দেওয়ার ইস্যুতে সাকিবের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের একাংশ। এছাড়া টি-স্পোর্টসকে দেওয়া সাকিবের সেই বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢালে। দুই সুপারস্টারের ব্যক্তিগত বিরোধ ছড়িয়ে পড়ে তাদের ভক্ত-সমর্থকদের মাঝে।

বুধবার মিরপুরে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে মুখোমুখি হবে ফরচুন বরিশাল আর রংপুর রাইডার্স। চলতি আসরে এটাই সাকিব-তামিমের শেষ মুখোমুখি লড়াই। সাকিব-তামিমের মতো পেশাদার ক্রিকেটাররা ভালো করেই জানেন যে, খ্যাতির বিড়ম্বনা (পড়ুন দর্শকদের অত্যচার) কীভাবে সামলাতে হয়। তাই বলে নিজেদের ক্রিকেটারদের নিজ দেশের মাটিতে প্রতি ম্যাচে দুয়ো দেওয়া মোটেও সমর্থনযোগ্য নয়। এমন নয় যে তারা পারফর্ম করছেন না। দুজনেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে দারুণ পারফর্ম করছেন। তাহলে কীসের জন্য এই দুয়ো? সাকিব-তামিমের ব্যক্তিগত বিরোধ তাদের মাঝেই থাকুক না।

মন্তব্য করুন: