কোন জেলার ক্রিকেটার সবচেয়ে বেশি?

৩১ অক্টোবর ২০২২

কোন জেলার ক্রিকেটার সবচেয়ে বেশি?

শুরুতেই বলুন তো, নিজ জেলা নিয়ে সবচেয়ে বেশি গর্ব কোন এলাকার মানুষের? বলা মুশকিল। তবে সম্ভবত নোয়াখালী আর বরিশালের। এই দুই জেলা থেকে ক্রিকেটারের সংখ্যা শুনলে আক্কেলগুড়ুম হয়ে যাবে। আবার যেমন ধরুন, বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার সাকিবের জেলা মাগুরা থেকে এত বছরেও তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে আরেকজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার না পাওয়াটাও একটু অবাক করার মতোই।

আরও অবাক হবেন, যখন জানবেন, ৬৪ জেলার মধ্যে ২৩ জেলা থেকে টেস্টযুগে এখনও কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার পায়নি বাংলাদেশ। কোন কোন জেলার? আরও ২০ জেলা থেকে মাত্র একজন করে ক্রিকেটারের গায়ে উঠেছে বাংলাদেশের জার্সি। কোন জেলাগুলোর? 

টেস্ট ও টি টোয়েন্টি অধিনায়ক মাগুরার সাকিব আল হাসান।  ছবি: সংগৃহীতআমরা কম থেকে শুরু করি। এক জেলার এক ক্রিকেটার। তাতে মাগুরার সাকিবের মতো আছেন মেহেরপুরের ইমরুল কায়েস, কক্সবাজারের মমিনুল হক, হবিগঞ্জের নাজমুল হোসেন, ফেনীর সাইফ উদ্দিন কিংবা পঞ্চগড়ের শরিফুল ইসলামরা। এছাড়া শরিয়তপুর, লক্ষীপুর, নাটোর, মুন্সিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ঝিনাইদহ, রাজবাড়ী, চাপাইনবাবগঞ্জ, নেত্রকোণা, গাইবান্ধা, পিরোজপুর, পটুয়াখালী থেকে এসেছেন একজন করে ক্রিকেটার। এমন ২০ জেলার মধ্যে দুটো জেলা এখানে বাকি রইল আপাতত।

সাবেক অধিনায়ক নড়াইল এক্সপ্রেস মাশরাফি বিন মুর্তজা।  ছবি: সংগৃহীত২ জন করে ক্রিকেটার এসেছেন ৯ জেলা থেকে। মাশরাফি বিন মর্তুজার নড়াইলের আরেক প্রতিনিধি ডলার মাহমুদ। মুশফিকুর রহিমের বগুড়ার শফিউল ইসলামও একসময় ছিলেন জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ। দিনাজপুরের লিটন দাস এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটের আশার বাতিঘর। তাঁর জেলার আরেক ক্রিকেটার ধীমান ঘোষ। জাতীয় দলে দীর্ঘদিন খেলা আবদুর রাজ্জাক ও রুবেল হোসেনের বাড়ি বাগেরহাট। আবার জাতীয় দলে খেলা অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দুই ক্রিকেটার শামীম হোসেন পাটোয়ারি ও মাহমুদুল হাসান জয়ের বাড়ি ইলিশের জেলা চাঁদপুরে। এছাড়া মানিকগঞ্জ, কুমিল্লা, মৌলভীবাজার, জামালপুর থেকে এসেছেন দুজন করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার।

সাতক্ষীরার কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান।  ছবি: সংগৃহীত৩ জন করে ক্রিকেটার বাংলাদেশ পেয়েছে ৪ জেলা থেকে। কুষ্টিয়া, যশোর, সাতক্ষীরা ও ফরিদপুর। কুষ্টিয়ার হাবিবুল বাশার সুমনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ লড়াই করার মানসিকতা পেয়েছিল। এই জেলারই সন্তান এনামুল হক বিজয়, মোহাম্মদ মিঠুন। রবিউল ইসলামের পর দখিনা হাওয়া নিয়ে সাতক্ষীরা থেকে এসেছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান ও সৌম্য সরকার। তিস্তাপারের রংপুরের ৬ ক্রিকেটার। শুরুটা বাঁহাতি পেসার সাজেদুল ইসলামের মাধ্যমে। এরপর একে একে সোহরাওয়ার্দি শুভ, নাসির হোসেন, আরিফুল হক, তানভীর হায়দার ও শুভাশিষ রায়।

ময়মনসিংহের সাইলেন্ট কিলার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।  ছবি: সংগৃহীতআবার ব্রক্ষ্মপুত্রপাড়ের ময়মনসিংহ থেকে জাতীয় দলে খেলেছেন ৭ জন। সবচেয়ে উজ্জ্বল নিঃসন্দেহে মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদ। সানোয়ার হোসেন, ফাহিম মুনতাসির সুমিত, মনিরুজ্জামান, শুভাগত হোম  থেকে হালফিলের মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মুনিম শাহরিয়াররা ময়মনসিংহের সন্তান।

ওয়ানডে অধিনায়ক চট্টগ্রামের তামিম ইকবাল।  ছবি: সংগৃহীত৮ জন করে ক্রিকেটার খেলেছেন ৩ জেলার। চট্টগ্রাম, সিলেট ও নারায়ণগঞ্জের। চট্টগ্রামের খান পরিবার অবদান দেশের ক্রিকেটে অবিস্মরণীয়। সেটি আকরাম খান থেকে নাফীস ইকবাল হয়ে তামিম ইকবাল পর্যন্ত। সিলেটের অলক কাপালি যে মশাল জে¦লেছিলেন, সে আলোয় জাতীয় দলের পথ খুঁজে নিয়েছেন  তাপস বৈশ্য, রাজিন সালেহ, এনামুল হক জুনিয়র থেকে এখনকার আবু জায়েদ রাহী, খালেদ আহমেদ, নাসুম আহমেদরা। নারায়ণগঞ্জও ক্রিকেটের উর্বর ভূমি। শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ, মোহাম্মদ শরিফ, শাহাদাত হোসেন রাজীব, নাজমুল ইসলাম অপুর মতো এখানকার ৮ ক্রিকেটার খেলেছেন বাংলাদেশের হয়ে।

রাজশাহীর নাজমুল হোসেন শান্ত।  ছবি: সংগৃহীতএবার টপ থ্রি। সবচেয়ে বেশি ক্রিকেটার সাপ্লাইয়ের জেলা। খুলনা, রাজশাহী ও ঢাকা। তিন নম্বরে খুলনা। খুলনা জেলার যেমন অনেক ক্রিকেটার আছেন বর্তমান জাতীয় দলেও। মেহেদী হাসান মিরাজ, নুরুল হাসান সোহান, আফিফ হোসেন, শেখ মাহেদী হাসানরা। এই জেলার ৯ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারের মধ্যে আছেন অকালপ্রয়াত মানজারুল ইসলাম রানাও। দুই নম্বরে রাজশাহী। এ জেলার ক্রিকেটের সমার্থক খালেদ মাসুদ পাইলট। সে পথে হেঁটেছেন মুশফিক বাবু, ফরহাদ রেজা, জুনায়েদ সিদ্দিকী থেকে বর্তমানের সাব্বির রহমান, নাজমুল হোসেন শান্তরা। পদ্মাপাড়ের আমের শহরের ১১ ক্রিকেটারের গায়ে উঠেছে জাতীয় দলের জার্সি।

জাতীয় দলে ঢাকার একমাত্র প্রতিনিধি পেসার তাসকিন আহমেদ।  ছবি: সংগৃহীতআর সবচেয়ে বেশি? এক নম্বরে? অন্য প্রায় সব কিছুর মতো এখানেও শীর্ষে রাজধানী ঢাকা। ২১ জন ক্রিকেটারের আঁতুড়ঘর ঢাকা। আমিনুল ইসলাম বুলবুল, মোহাম্মদ রফিক, মেহরাব হোসেন অপি, জাভেদ ওমর বেলিম গোল্লু, হাসিবুল হোসেন শান্ত, খালেদ মাহমুদ সুজন, মোহাম্মদ আশরাফুল, শাহরিয়ার নাফীসরা মাঠ কাঁপিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার খেলোয়াড়ের সেই স্রোতে ভাটার টান। তাসকিন আহমেদই কেবল নিয়মিত প্রতিনিধি।

আর ওই যে শুরুতে বলেছিলাম না নোয়াখালী-বরিশালের কথা! এই দুটো জেলাই আবার বাকি রেখেছিলেন একটু পরে। আঞ্চলিকতা নিয়ে তাঁদের এত গর্ব। কিন্তু জাতীয় দলে ক্রিকেটার তো মাত্র একজন করে ক্রিকেটারের চেয়ে বেশি দিতে পারেনি জেলা দুটো। বরিশালের যেমন পেস বোলার কামরুল ইসলাম রাব্বী। সোহাগ গাজী কিংবা ফজলে মাহমুদ রাব্বীর দাবি তাঁরা করতে পারে। কিন্তু প্রথমজন তো পটুয়াখালীর; পরেরজন পিরোজপুরের। আবার বৃহত্তর নোয়াখালীর মধ্যে সাইফ উদ্দিন ফেনীর, হাসান মাহমুদ লক্ষীপুরের। প্রপার নোয়াখালীর একজনও ছিলেন না। পারভেজ হোসেন ঈমনের মাধ্যমে অবশেষে সে আক্ষেপ ঘোচে নোয়াখালীর।

তাহলে বাকি রইল কোন ২৩ জেলা? কোন সে জেলাগুলো থেকে একজন, অন্তত একজনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার পায়নি বাংলাদেশ? যে জেলাগুলোর নাম বলা হল না। সেটি আপনিই হিসেব করে বের করুন না!

মন্তব্য করুন: