অথচ ভেঙ্কটেশ আইয়ার হতে পারতেন চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট!

১৬ এপ্রিল ২০২৩

অথচ ভেঙ্কটেশ আইয়ার হতে পারতেন চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট!

১৫ বছর আগের কথা। ২০০৮ সাল। আইপিএলের প্রথম আসরের প্রথম ম্যাচেই ব্রেন্ডন ম্যাককালামের তান্ডব। কলকাতা নাইট রাইডার্সের জার্সিতে ৭৩ বলে অপরাজিত ১৫৮ রানের বিস্ফোরক ইনিংস।

সেই শুরু। এতদিন পর্যন্ত সেই শেষ হয়ে ছিল। কারণ পরের ১৫ বছরে কত কিছু হল! বিশ্বক্রিকেটে অনেক পালাবদল হল। আইপিএল হয়ে উঠল সবচেয়ে বড় ক্রিকেট আয়োজন; কারও কারও চোখে তো বিশ্বকাপের চেয়েও বড়। কিন্তু আরেকজন সেঞ্চুরিয়ান আর পায়নি কেকেআর।

অবশেষে কলকাতা নাইট রাইডার্স পেল আরেক সেঞ্চুরিয়ানের। যাঁর আদতে ক্রিকেটারই হবার কথা ছিল না। সেই ভেঙ্কটেশ আইয়ারের ব্যাটেই সেঞ্চুরির উল্লাস কলকাতার। যদিও জয়ের উচ্ছ্বাসে ম্যাচটা শেষ করতে পারেনি তাঁরা।

মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে ম্যাচে আইয়ারের এই সেঞ্চুরি। মাত্র ৪৯ বলে। ৯টি ছক্কা ও ৬টি চারে। শুধু কি তাই! কলকাতার ব্যাটিং ইনিংসের প্রথম সাড়ে ১১ ওভারে যত বাউন্ডারি হয়েছে, সবই আইয়ারের ব্যাট থেকে!

মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে মাত্র ৪৯ বলে সেঞ্চুরি হাঁকান ভেঙ্কটেশ আইয়ারকিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। কেকেআরের ১৮৫ রান টপকে মুম্বাই ম্যাচ জিতেছে ৫ উইকেটে। 

তাতে আইয়ারের সেঞ্চুরির গুরুত্ব কিছুটা কমছে সত্যি; তবে মাহাত্ম্য কমছে না। টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি বলে কথা!

সেই সেঞ্চুরিতে ক্যারিয়ারের চ্যালেঞ্জগুলোর কথা কি মনে পড়ছিল আইয়ারের? ক্রিকেটার হওয়ার চ্যালেঞ্জগুলো?

মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে এক স্বচ্ছল পরিবারে জন্ম। কার্টুন দেখার বয়স থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতেন আইয়ার। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এক ম্যাচে ভারতের সৌরভ গাঙ্গুলি আউট হয়ে যাওয়ায় নাকি যারপরনাই কেঁদে অস্থির হয়েছিলেন। সেই থেকেই ক্রিকেটের প্রতি অনুরাগের কথা জানতে পারেন মা।

তবে আইয়ারের পরিবারে পড়াশোনার গুরুত্ব ছিল বরাবরই বেশি। তবুও ছেলের ভালোবাসা যেহেতু ক্রিকেট, তাই সে পথেও বাধার কাঁটা ছিটায়নি পরিবার। 

আইয়ার নিজেও ক্রিকেট-পড়াশোনা চালান সমানতালে। কতটা? বাণিজ্যে তাঁর স্নাতক ডিগ্রীই সে কথা বলবে। এমনকি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট হিসেবে পড়তেও ভর্তি হয়েছিলেন। পরে ক্রিকেটে মনোযোগ দিতে গিয়ে সিএ পড়া ছাড়তে হয় আইয়ারকে। কিন্তু ফিনান্সে ঠিকই এমবিএ করেন।

তো এমন পড়াশোনার আইয়ার যদি ক্রিকেটার না হয়ে কর্পোরেট চাকুরে হতেন, তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকত!

আইয়ার নিজেও ক্রিকেট-পড়াশোনা চালান সমানতালেছোটবেলায় স্থানীয় এক কোচের অধীনে ক্রিকেটে হাতেখড়ি আইয়ারের। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যন্ত ছিলেন উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। পরবর্তীতে মিডিয়াম পেস বোলিংও শুরু করেন। এখন মূলত ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসেবেই খেলেন।

২০১৫ সালে মধ্যপ্রদেশের হয়ে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে অভিষেক আইয়ারের। আর লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বিজয় হাজারে ট্রফিতে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড আইয়ারের। ১৪৬ বলে ১৯৮ রান করে ডেভিড ওয়ার্নারের রেকর্ড ভাঙেন তিনি।

একই বছর সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতেও অভিষেক আইয়ারের। সেখানেও বোলার হিসেবে প্রতিভার ঝলক দেখান তিনি। এ টুর্নামেন্টে সবচেয়ে কম খরুচে বোলারদের একজন ছিলেন তিনি।

ঘরোয়া ক্রিকেটের এসব টুর্নামেন্টে নিয়মিত ভালো পারফরম্যান্স করে যাওয়া আইয়ার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনও খুব ভালো করতে পারেননি। ২ ওয়ানডে ও ৯ টি-টোয়েন্টিতে পারফর্ম করতে পারেননি সেভাবে।

আইপিএলে আইয়ার নিজেকে প্রথম চেনান ২০২১ সালে অভিষেক আসরে। কেকেআরের ফাইনালে ওঠার পথে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

আইপিএলে আইয়ার নিজেকে প্রথম চেনান ২০২১ সালে অভিষেক আসরে২০ লাখ রুপিতে কেকেআর কিনেছিল আইয়ারকে। আইপিএলের প্রথম ভাগে একটি ম্যাচও খেলার সুযোগ হয়নি। করোনার কারণে সেবার টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় ভাগ হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে। আর সেখানে ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়ে প্রথম ম্যাচেই মারকুটে ব্যাটিং করেন। এরপর করেন ৪টি ফিফটি। পয়েন্ট টেবিলের তলানীতে থাকা কেকেআর-এর ফাইনালে তোলার আইয়ারের ব্যাটিংয়ের ছিল বড় ভূমিকা।

ওই পারফরম্যান্সেই সুযোগ পান জাতীয় দলে। কিন্তু সেখানে খুব একটা ভালো করতে পারেননি। আবার হার্দিক পাণ্ডিয়ার মত পারফরমারদের কারণেও দলে জায়গা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে এ অলরাউন্ডারের।

আইপিএলের এই সেঞ্চুরিটা তাই আইয়ারের ক্যারিয়ারের বাঁক বদলের মুহূর্ত হয়ে যেতে পারে। 

শৈশব-কৈশোরে পড়ালেখা ও ক্রিকেট একসঙ্গে চালিয়েছেন। রানের হিসাবের পাশাপাশি মিলিয়েছেন ব্যবসায় শাখার কঠিন সব হিসাব। আইপিএলের এই সেঞ্চুরির পর জাতীয় দলে নিজের জায়গা পোক্ত করার হিসাবও হয়তো দ্রুতই মেলাতে পারবেন ভেঙ্কটেশ আইয়ার।

মন্তব্য করুন: