আইপিএলে ফিরে আসার গল্প

আইপিএলে ফিরে আসার গল্প

তাঁদের ক্যারিয়ারের শেষ দেখে ফেলেছিলেন প্রায় সবাই। ফেলে দিয়েছিলেন বাতিলের খাতায়। কিন্তু আইপিএলের এবারের মৌসুমে সবাইকে ভুল প্রমাণ করলেন তাঁরা। পারফরমেন্স দিয়ে চমকে দিলেন সবাইকে। দেখিয়ে দিলেন এখনও ক্রিকেটকে কত দেয়ার আছে তাঁদের!

এবারের আইপিএল শেষে দেখে নেওয়া যাক অমন পাঁচ ক্রিকেটারকে, যাঁরা মৌসুমের শুরুতে আলোচনাতেই ছিল না। দলের একাদশে থাকবে কি না, তাও নিশ্চিত ছিল না। কিন্তু পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে যারা দলের জন্য পারফর্ম  করেছেন। হয়েছেন দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়।

এ মৌসুমে রাহানের প্রত্যাবর্তন অবিশ্বাস্যঅজিঙ্কা রাহানে (চেন্নাই সুপার কিংস)

ফিরে আসা খেলোয়াড়দের মধ্যে চেন্নাই সুপার কিংসরে অজিঙ্কা রাহানে অন্যতম। খেলেছেন ১৪টি ম্যাচ। ৩২.৬০ গড়ে রান করেছেন ৩২৬। ফিফটি পেরোনো দুটি ইনিংস। তবে এসব ছাপিয়ে চমকে দিয়েছে তাঁর স্ট্রাইক রেট। ১৭২.৪! 

রাহানের এই রূপান্তর বোঝা যাবে তাঁর গত ৩ আইপিএলের পারফরম্যােন্স দেখলে। তাতে ১০৪.৫ স্ট্রাইক রেটে ও ১৬ গড়ে মাত্র ২৫৪ রান করেছিলেন। আইপিএল ক্যারিয়ারেই এর আগে কোনো মৌসুমেই এই ব্যাটসম্যানের স্ট্রাইক রেট ১৪০তে পৌঁছায়নি। এ মৌসুমে রাহানের প্রত্যাবর্তন তাই অবিশ্বাস্য।

শুরুতে চেন্নাইয়ের একাদশ ভাবনায় ছিলেন না। পরে বেন স্টোকসের অনুপস্থিতিতে জায়গা পান দলে। অন্যরকম গল্প লেখেন নিজের। ফেরার গল্প! শুধু চেন্নাই দলেই জায়গা করে নেননি রাহানে, সেখানকার পারফরম্যান্স ভারতের ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ দলেও ডাক পাওয়ার ক্ষেত্রে রেখেছে ভূমিকা।

ঝুঁকির প্রতিদান দিয়েছেন শঙ্করবিজয় শঙ্কর (গুজরাট টাইটানস)

রাহানের মত বিজয় শঙ্করও আইপিএলের শেষ তিনটি আসরে ভালো করতে পারেননি। গত মৌসুমে মাত্র চারটি ম্যাচ খেলেছেন। এ বছর গুজরাটের একাদশে জায়গা পাবার নিশ্চয়তা ছিল না। তবে নেট অনুশীলনে এত ভালো ব্যাটিং করেন যে, গুজরাট টিম ম্যানেজমেন্ট তাঁকে একাদশে রাখার ঝুঁকি নেয়। 

ঝুঁকির প্রতিদান দিয়েছেন শঙ্কর। করেছেন ৩০১ রান। নিজের আইপিএল ক্যারিয়ারে  প্রথমবারের মত ৩০০-র বেশি রান করেছেন। ক্যারিয়ার সেরা ১৬০ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন। আছে তিনটি অর্ধশতক। 

ক্যারিয়ার ডুবতে থাকা শঙ্কর এমন দুর্দান্ত পারফর্ম করবেন, কে ভেবেছিলেন!

চাওলা প্রমাণ করলেন ‘এইজ ইজ জাস্ট আ নাম্বার’পীযূষ চাওলা (মুম্বাই ইন্ডিয়ানস)

৩৪ বছর বয়সে এসে পীযূষ চাওলা তাঁর বোলিং পারফরমেন্সে সবাইকে অবাক করেছেন। অথচ গেল আসরে কোন দল কেনেনি তাঁকে। অবিক্রিত থাকার কারণে সে মৌসুমে ধারাভাষ্য করেছেন। 

তবে এবারের মৌসুমে মানসম্মত স্পিনার দলে না থাকায় সুযোগ পান মুম্বাই ইন্ডিয়ানসে। সুযোগেই বাজিমাত করেছেন তিনি। নিয়েছেন ২২টি উইকেট। আর এতেই প্রথমবারের মত কোন আইপিএল আসরে ২০টির বেশি উইকেট শিকার করলেন চাওলা। 

চাওলা প্রমাণ করলেন ‘এইজ ইজ জাস্ট আ নাম্বার।’

২৭ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় শিকারী মোহিত শর্মামোহিত শর্মা (গুজরাট টাইটানস)

গুজরাট টাইটানসের ফাইনালে হারের জন্য হয়ত এখন মোহিত শর্মাকেই দায়ী করবেন সমর্থকরা। কিন্তু পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে গুজরাটের পেস বোলিংকে শক্তিশালী অবস্থানে রাখায় ভূমিকা রেখেছেন তিনি। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। 

এক সময় জাতীয় দলের পেস ডিপার্টমেন্টের ভরসা ছিলেন মোহিত। এরপর হারিয়ে গেলেন আলোচনা থেকে। আইপিএলের ২০১৯ থেকে ২০২২ মিলিয়ে ৪ মৌসুমে খেলেছেন মোটেই দুটি ম্যাচ। কিন্তু এবার? ১৪টি ম্যাচে ২৭ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় শিকারী মোহিত শর্মা। নিজেকে যেন চেনালেন অন্যভাবে। আরেকবার দেখালেন তাঁর পেস ঝলকানি!

গত বছর অবিক্রিত ছিলেন ইশান্ত শর্মাইশান্ত শর্মা (দিল্লি ক্যাপিটালস)

গত বছর অবিক্রিত ছিলেন ইশান্ত শর্মা। শেষ ৩ মৌসুম মিলিয়ে খেলেছেন মাত্র চারটি ম্যাচ। এ বছর দিল্লি ক্যাপিটালস তাঁকে ভিত্তিমূল্যে কিনে নেয়। প্রথম পাঁচ ম্যাচে খেলার সুযোগ পাননি। কিন্তু টানা পাঁচ ম্যাচ হারার পর দলে পরিবর্তন আনে দিল্লি টিম ম্যানেজমেন্ট। আর তাতেই বাজিমাত অভিজ্ঞ ইশান্তের। 

সুযোগ পেয়ে নিজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগান তিনি। ৮ ম্যাচে ১০ উইকেট নেন। বিশেষত পাওয়ার প্লেতে ছিলেন দুর্দান্ত। মাত্র ৭.৮৮ ইকোনমি রেটে ছয়টি উইকেট শিকার করেন। মৌসুমজুড়ে তাঁর বোলিং গড় ২০.৬ এবং বোলিং স্ট্রাইক রেট ১৫। এটি যে কোনো আইপিএল মৌসুমে ইশান্ত শর্মার সেরা বোলিং ফিগার।

মন্তব্য করুন: