বছরের আলোচিত ঘটনা: পাপন-সালাউদ্দিনের কথার লড়াই

২৮ ডিসেম্বর ২০২৩

বছরের আলোচিত ঘটনা: পাপন-সালাউদ্দিনের কথার লড়াই

বাংলাদেশের ক্রিকেট এবং ফুটবল অঙ্গনের দুই হর্তাকর্তা নাজমুল হাসান পাপন এবং কাজী সালাউদ্দিন। দেশের জনপ্রিয়তম দুটি খেলার সর্বোচ্চ সংস্থার প্রধান হয়েও তাদের মাঝে কোনো সদ্ভাব নেই। বিদায়ী বছরের শুরুর দিকে উভয়ে জড়িয়েছিলেন কথার লড়াইয়ে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বিজয়ের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণত বিসিবি সভাপতি পাপনকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানান। এই বিষয়ে খোঁচা মেরেই কথার লড়াইয়ের সূত্রপাত করেছিলেন বাফুফে সালাউদ্দিন।

গত এপ্রিলে অনুষ্ঠিত ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিক ফুটবলের এশিয়ান অঞ্চলের বাছাইপর্বে যেতে পারেনি সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ নারী দল। কারণ হিসেবে বাফুফে দাবি করেছিল, 'টাকার অভাবে' নাকি তারা মেয়েদের দলকে বাছাইপর্বে পাঠাতে পারেনি। এ নিয়ে ওই সময় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল দেশের ক্রীড়াঙ্গন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ফোন করে কাজী সালাউদ্দিনের কাছে এর কারণ জানতে চাওয়া হয়। এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে পাপনকে খোঁচা মারেন কাজী সালাউদ্দিন।

৩ এপ্রিলের সংবাদ সম্মেলনে কাজী সালাউদ্দিন বলেছিলেন, “মেয়েরা সাফল্য পেলে প্রধানমন্ত্রী, আর্মি চিফসহ সবাই সাহায্য করে থাকে। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) ফুটবলেরও প্রিয়। সবার ব্যক্তিত্ব তো এক না। আমি তো লোক দেখিয়ে বলব না, 'এই প্রধানমন্ত্রী ফোন দিয়েছে।' আমি ওই রকম না। আপনাদের বুঝতে হবে। আমি ফুটবল ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছি। স্বাধীনতা থেকে আজ পর্যন্ত। আমি ওই নাটক করতে পারব না। আমি প্রধানমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা জানাব। আমি লোক দেখাতে পারব না। দুঃখিত, এটাই আমার চরিত্র।”

এমন ঘটনাপ্রবাহের মাঝে ৭ এপ্রিল মিরপুর শেরেবাংলায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেন সাংবাদিকরা। জবাবে পাপন বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ফোন করলে আমি যেখানে থাকি, যে অবস্থায় থাকি ফোন ধরি। আমি জানি না কেন বলেছে…। এটা নিয়ে আমি মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। এটার সাথে এটার কী সম্পর্ক আমি জানি না।”

পাপন সেদিন মজা করে বলেন, “মনে তো হয় সমস্যাটা আপনাদের (সাংবাদিকদের) নিয়েই। আপনারা এত বাজে প্রশ্ন করলেন…. ‘ওই টাকা দিয়ে কী করছেন….?’ এটা করলে তো যে কারোরই মাথা খারাপ হবে এটা স্বাভাবিক।”

মিরপুর শেরেবাংলায় সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি সভাপতি আরও বলেছিলেন, “যে যত কথাই বলুক, এসব নিয়ে আমি মন খারাপ করি না। তবে আমার কাছে সবচেয়ে খারাপ লাগছে মেয়েরা (অলিম্পিক বাছাই) যেতে পারল না। তাও মাত্র ২০ লাখ টাকার জন্য (প্রকৃত ব্যয় আরও বেশি)! এর চেয়ে দুঃখ, কষ্ট… মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কী কষ্টটাই না পেয়েছেন! এই যে আপনাদের চ্যানেলগুলা (মিডিয়া) আছে না, তাদের কারও মালিকের কাছে বললেই তো দিয়ে দিত। আপনারা জানেন…বিশ্বাস করেন আমি কারও সাথে এটা বলিনি… আমাদের খেলোয়াড়েরাই তো দিত! বলত একবার। এটা কী! এত গোপনে জিনিসটা করেছে… যে প্রসেসে করেছে… খুব দুঃখজনক।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের ক্রিকেট বোর্ডে, ফুটবল বোর্ডে যে সমস্ত পরিচালকরা আছে, তারা ২০ লাখ টাকা দিতে পারবে না! তাদের অনেকের দৈনিক খরচই তো ২০ লাখ টাকা। আমার কাছে এটা আশ্চর্য লাগে। আমার মনে হয় কোনো ঘটনা আছে… আমি জানি না। আমার কাছে খব আশ্চর্য লাগে। দুঃখজনক। দেশের জন্য এর চেয়ে বড় বদনাম…. দেশের বদনাম…. আর কিছু হয় না। আমরা বলছি আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে আমরা বলছি যে মাত্র ২০ লাখ টাকার জন্য আমাদের মেয়েরা প্রি অলিম্পিক খেলতে যেতে পারল না! এর চেয়ে লজ্জার বিষয় আর হয় না। এদের সাথে কথা বলার প্রশ্নই ওঠে না।”

মন্তব্য করুন: