মুস্তাফিজকে হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিয়েছে চেন্নাই : ফাহিম

মুস্তাফিজকে হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিয়েছে চেন্নাই : ফাহিম

আইপিএল শেষ হয়নি, কিন্তু মুস্তাফিজুর রহমানের দেশে ফেরার সময় হয়ে গেছে। আজ (বৃহস্পতিবার) সন্ধায় দেশে ফিরে আসছে মুস্তাফিজ। দশ ম্যাচ শেষে জসপ্রিত বুমরাহর পর দ্বিতীয় সেরা বোলারের তকমা নিয়ে মুস্তাফিজ ফিরে আসছে। শেষ ম্যাচে দারুন বোলিং করেও কোনো উইকেট না পাওয়ার কারণে মুস্তাফিজকে দ্বিতীয় হয়েই ফেরত আসতে হলো।

গতকাল (বুধবার) আবারও মুস্তাফিজ দেখিয়ে দিল, কেবলমাত্র স্লোয়ার বা কাটারই নয়, ওর সিম আপ লেন্থ বলগুলো খেলাটাও কতটা কঠিন। ওর বোলিংয়ে তিনটি বিষয় চোখে পড়েছে। প্রথমত, ক্রস সিম ডেলিভারির পরিবর্তে সিম আপ ডেলিভারিকে প্রাধান্য দিয়ে বাতাসে অথবা উইকেট থেকে কিছুটা মুভমেন্ট আদায় করে নেয়া। দ্বিতীয়ত, আগের তুলনায় ওয়াইডিশ ডেলিভারির পরিবর্তে অনেক বেশি উইকেট টু উইকেট বল করা এবং তৃতীয়ত, শর্ট পিচ  ডেলিভারি থেকে সরে এসে লেন্থ ডেলিভারিকে প্রাধান্য দেওয়া।

মূল কথা হচ্ছে, ওর স্টক ডেলিভারিতে একটা বেশ বড়  পরিবর্তন এসেছে এবং সেটি ওর বোলিং কৌশলেও বিশাল পরিবর্তন এনেছে। আগের মতো অফ-সাইডে একের পর এক একঘেয়ে কাটার করা থেকে বের হয়ে এসেছে। আগের চাইতে অপশন আরও বেড়েছে এবং এখন যা করে তা জেনে শুনে এবং ভেবে চিন্তেই করে। এবং তা করে বলেই ওকে অনেক আত্মবিশ্বাসী ও রিল্যক্সড মনে হয়। আমি নিশ্চিত, আগামীতে ওকে আমরা আরো আক্রমণাত্মক চেহারায় দেখতে পাব এবং নতুন ও পুরনো দুই ধরনের বলেই ও সমান কার্যকরী হবে।

তবে এই কৌশলগত পরিবর্তনগুলির পাশাপাশি চেন্নাই সুপার কিংস যেভাবে পুরো সময় জুড়ে ওর পাশে দাঁড়িয়েছে, ওকে যে সম্মান ও গুরুত্ব দিয়েছে, ওর মূল্যায়ন করেছে, এক কথায় বলতে গেলে যে পরিবেশ দিয়েছে- সেটিও এই ইতিবাচক পরিবর্তন গুলি আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। নিজের উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেললে একজন যোদ্ধার আর কিছুই থাকেনা। সিএসকে মুস্তাফিজকে সেই হারানো বিশ্বাসটি আবার ফিরিয়ে দিয়েছে।

এই পুরো প্রক্রিয়াটির মধ্যে একটি শিক্ষনীয় ব্যাপার আছে আমাদের সবার জন্য। ক্রিকেট পারফরম্যান্সের সাথে মনস্তত্ত্বের একটা জটিল সম্পর্ক আছে। এটি আমরা মুখে বললেও কতটা উপলব্ধি করি তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আমরা আমাদের খেলোয়াড়দের যে পরিবেশ দেই, তা তাদের মানসিক উন্নয়নের জন্য কতটা অনুকুল সে প্রশ্ন থেকেই যায়। মুস্তাফিজের এই ঘটনা আমাদের সবার জন্য একটি উদাহরণ হতে পারে। এটি শুধু জাতীয় দল বা কেবল ক্রিকেটের জন্যই প্রযোজ্য নয়, সবার জন্যই।

আমি ব্যক্তিগতভাবে শঙ্কায় ছিলাম, মুস্তাফিজুর রহমানের ভবিষ্যৎ নিয়ে। গত বেশ কিছুদিন থেকে ওর পারফরমেন্স মোটেই সন্তোষজনক ছিল না। সত্যি কথা বলতে, জাতীয় দলে বা প্রথম এগারোতে ওর জায়গা হবে কিনা সেটি নিয়ে সন্দেহ  প্রকাশ করতেও অনেকে দ্বিধা করেনি। অথচ এই কয়দিনে সবকিছুই বদলে গেল।

আমি নিশ্চিত সিএসকের পরবর্তী ম্যাচে দল, সমর্থক, ধারাভাষ্যকারসহ সবাই মুস্তাফিজের অভাব অনুভব করবে। মুস্তাফিজের না থাকার ব্যাপারটা এবং তার ফেলে আসা বিশেষ মুহূর্তগুলো বার বার টিভি স্ক্রিনে ভেসে উঠবে। সবার মুখে মুখে উচ্চারিত হবে মুস্তাফিজের নাম। আর তার নামের পাশাপাশি উঠে আসবে বাংলাদেশের কথাও।

একজন খেলোয়াড়ের জন্য এর চাইতে বড় অর্জন আর কী হতে পারে?

- খ্যাতিমান ক্রিকেট কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিমের ফেসবুক পোস্ট থেকে।

মন্তব্য করুন: