কেমন হলো বাংলাদেশের এশিয়া কাপের প্রস্তুতি

৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কেমন হলো বাংলাদেশের এশিয়া কাপের প্রস্তুতি

এশিয়া কাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে খেলা টি-টুয়েন্টি সিরিজটি প্রত্যাশিতভাবেই জিতেছে বাংলাদেশ। বোলারদের নৈপুণ্যে প্রতিপক্ষকে সহজে ধরাশায়ী করলেও সে অর্থে ব্যাটারদের পরখ করে দেখার সুযোগ খুব একটা পায়নি স্বাগতিকরা। শেষ ম্যাচে আগে ব্যাটিং করলেও বৃষ্টির বাধায় পুরো ২০ ওভার খেলতে পারেনি তারা। সব মিলিয়ে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের আসরের জন্য দলকে ভালোভাবে প্রস্তুত বলে মনে করছেন অধিনায়ক লিটন দাস।

ডাচদের বিপক্ষে সিরিজে দলে থাকা ১৬ ক্রিকেটারের সবাইকেই খেলিয়েছে বাংলাদেশ। বুধবার সিলেটে শেষ ম্যাচে একাদশে পাঁচ পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল তারা। তবে বৃষ্টির কারণে মাঝপথে ম্যাচ শেষ হয়ে যাওয়ায় এদিন প্রথমবারের মতো একাদশে জায়গা পেলেও বোলিং কিংবা ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাননি সাইফউদ্দিন। এছাড়া সিরিজ জুড়ে বাকি ১৫ জনের সবাই ব্যাটিং কিংবা বোলিংয়ের সুযোগ পেয়েছেন।

এশিয়া কাপের আগে দলের প্রস্তুতি নিয়ে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে লিটন বলেন, সব মিলিয়ে সব দিক থেকেই আমার মনে হয় ইতিবাচক। যারাই ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছে, ভালো ক্রিকেট খেলেছে। অনুশীলন তো গুরুত্বপূর্ণ, এর চেয়েও বড় ব্যাপার ম্যাচে আপনি কতটা ডেলিভার করতে পারছেন। ম্যাচ খেললে উন্নতি হয়, গেম সেন্স বাড়ে। এখন আমার মনে হয়, আমরা খুব ভালোভাবেই প্রস্তুত এশিয়া কাপের জন্য।

বল হাতে নিজেদের প্রস্তুতিটা ভালোভাবে সেরেছেন তাসকিন-মুস্তাফিজরাপ্রথম দুই ম্যাচে টস জিতে আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়ার পুরো সুযোগ কাজে লাগান বাংলাদেশ বোলাররা। তাদের নৈপুণ্যে এই ম্যাচগুলোয় জয়ের ভিত পায় স্বাগতিকরা। প্রথম ম্যাচে ডাচদের ১৩৬ রানে আটকে রাখার পর দ্বিতীয় ম্যাচে তাদের গুটিয়ে দেয় ১০৩ রানে। ফলে কোনো চাপ ছাড়াই দলকে জয় এনে দেন ব্যাটাররা।

এই দুই ম্যাচ খেলে উইকেট নিয়ে সিরিজের সেরা বোলার হয়েছেন তাসকিন আহমেদ। অন্যদিকে কিপ্টে বোলিংয়ে নিজের প্রস্তুতি সেরেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। বাঁহাতি এই পেসার দুই ম্যাচে ওভার প্রতি দশমিক ২৮ করে রান দিয়ে শিকার করেন উইকেটে। সিরিজে এক ইনিংসে বোলিংয়ের সুযোগ পাওয়া নাসুম আহমেদ নিয়েছেন উইকেট।

অন্যদিকে প্রথম দুই ম্যাচ মিলিয়ে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পান কেবল শুরুর চার ব্যাটার। প্রত্যেকে তাদের দায়িত্ব ঠিকঠাকভাবেই পালন করেন। অন্যদের সুযোগ করে দিতে শেষ ম্যাচে বসানো হয় দুই নিয়মিত ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন তানজিদ হাসান তামিমকে। এদিন সিরিজে প্রথমবারের মতো ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে তা কাজে লাগান জাকের আলী অনিক। বৃষ্টির বাধায় খেলা বন্ধ হওয়ার আগে তিনি অপরাজিত থাকেন ১৩ বলে ২০ রানে। তিন বছর পর জাতীয় দলের জার্সিতে টি-টুয়েন্টি খেলতে নেমে নুরুল হাসান সোহান অপরাজিত থাকেন ১১ বলে ২২ রানে।

শেষ ম্যাচে ৭৩ রান করেন লিটনদুই ম্যাচে ফিফটি হাঁকিয়ে সিরিজের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন লিটন। ১৪৫ রান করে সিরিজ সেরাও হয়েছেন এই উইকেটকিপার-ব্যাটার। দলের একমাত্র ব্যাটার হিসেবে তিন ইনিংসেই ব্যাটিংয়ের সুযোগ পান তিনি। দলের জয়ে অবদান রাখতে পারায় নিজের পারফরম্যান্সেও সন্তুষ্ট বাংলাদেশ অধিনায়ক।

আমি পারফর্ম করছি, এটাও দলের জন্য দরকার। কারণ নেতা যখন পারফর্ম করে না, দল মানসিকভাবে একটু পিছিয়ে থাকে। সেদিক থেকে বলব, আমার দলের যেহেতু সবাই পারফর্ম করছে, আমারও একটা চ্যালেঞ্জ ছিল যেন পারফর্ম করতে পারি। সেদিক থেকে আমি খুবই খুশি যে দলের একটি অংশ হিসেবে প্রভাব রাখতে পারছি।

আলাদা করে বলতে হয় সাইফ হাসানের কথা। দুই বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে নামা এই অলরাউন্ডারকে দলে নেওয়া হয়েছিল বিভিন্ন ভূমিকায় অবদান রাখতে পারেন বলে। পারফরম্যান্সের বিচারে সে পরীক্ষায় সফল বলা চলে তাকে। প্রথম ম্যাচে বল হাতে উইকেট নেওয়ার পর ১৯ বলে ৩৬ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে দলকে জয় এনে দেন তিনি।

এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিং-ব্যাটিং কোনোটারই সুযোগ হয়নি সাইফের। তৃতীয় ম্যাচে নেমেছিলেন ওপেনিংয়ে। তবে সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি। ফেরেন ১২ রান করে।

সিরিজে কেবল শেষ ম্যাচেই ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন তাওহিদ হৃদয়। কিন্তু দলকে হতাশ করেন ডানহাতি এই ব্যাটার। অপরপ্রান্তে লিটন আগ্রাসী মেজাজে খেললেও ক্রিজে থিঁতু হতে সময় নেন তিনি। তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ফেরেন ১৪ বলে রান করে।

এর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজেও রান তুলতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। এক ম্যাচে ৩৭ বলে করেছিলেন ৩৬ রান। আরেক ম্যাচ ফেরেন রানের খাতা খোলার আগেই। সবশেষ ১০ টি-টুয়েন্টি ইনিংসে একবারও ৪০ রান করতে পারেননি তিনি।

তবে হৃদয়ের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স নিয়ে মোটেও চিন্তিত নন অধিনায়ক লিটন। তার বিশ্বাস এশিয়া কাপে ঠিকই জ্বলে উঠবেন তিনি।

আমি জানি, আমাদের দলের জন্য হৃদয় কী করতে পারে। অধিনায়ক হিসেবে আমার পুরো বিশ্বাস আছে, সে এশিয়া কাপে গিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে এবং ভালো ক্রিকেট খেলবে।

আগামী ১১ সেপ্টেম্বর হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে এশিয়া কাপ অভিযান শুরু করবে বাংলাদেশ।বিগ্রুপে লিটনের দলের বাকি দুই প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা (১৩ সেপ্টেম্বর) ও আফগানিস্তান (১৬ সেপ্টেম্বর)।

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Add