ধেয়ে আসছেন হলান্ড!

২০ এপ্রিল ২০২৩

ধেয়ে আসছেন হলান্ড!

তাঁর মাঠে নামা মানেই গোলের নিশ্চয়তা। ডান পা, বাঁ পা, হেডে। এক গোল, দুই গোল, হ্যাটট্রিকে। না হয় ক্যারিয়ারের শুরুতে আছেন! না হয় বয়স মাত্র ২২ বছর! তবু গোল করার প্রতিভার যে প্রতিশ্রুতি আর্লিং হলান্ডের, তাতে কি লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে তুলনা করা যায়?

চলতি মৌসুমে এরই মধ্যে ৪০ ম্যাচে ৪৭ গোল করেছেন ম্যানচেস্টার সিটিতে খেলা এই নরওয়ের স্ট্রাইকার। ক্লাব কোচ পেপ গার্দিওলা ঠিকই ওই দুই কিংবদন্তির সঙ্গে একই ব্রাকেটে রাখেন হলান্ডকে, ‘গোল করার দিক থেকে ক্রিশ্চিয়ানো এবং হলান্ড অনেকটা একই রকম। মেসি অবশ্য আরও পরিপূর্ণ। মাঠের যে কোনও জায়গায় ও খেলতে পারেন। আর রোনালদো ও হলান্ড হচ্ছে গোল মেশিন।’ 

ম্যানচেস্টার সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা ও আর্লিং হলান্ড

হলান্ড সত্যিই গোল মেশিন। এই দেখুন না, অনেকের চোখে পৃথিবীর কঠিনতম লিগ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এসে প্রথম মৌসুমেই কেমন দুর্দান্ত। ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে লিগে এরই মধ্যে ২৮ ম্যাচে করেছেন ৩২ গোল। ইংলিশ লিগে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল করার রেকর্ডের খুব কাছাকাছি তিনি। বর্তমানে এই রেকর্ডের মালিক অ্যান্ডি কোল এবং অ্যালান শিয়ারার। দুজনের ৩৪ গোল অবশ্য ৪২ ম্যাচের মৌসুমে। 

এখন লিগ মৌসুমে ম্যাচ সংখ্যা কমেছে। তবে হলান্ডের রেকর্ডের পথে তা বাধা হবে কিভাবে! সিটির বাকি ৮ ম্যাচে ৩ গোল করলেই হবে। যেটা হলান্ডের এক ম্যাচেও হয়ে যেতে পারে! 

প্রিমিয়ার লিগের অভিষেক মৌসুমে ৩০ বা এর বেশি গোল করা খেলোয়াড়

প্রিমিয়ার লিগের অভিষেক মৌসুমে মাত্র দুইজন খেলোয়াড় ৩০ বা এর বেশি গোল করেছেন। কোল ১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে নিউক্যাসল ইউনাইটেডের হয়ে করেন ৩৪ গোল; সান্ডারল্যান্ড স্ট্রাইকার কেভিন ফিলিপস ১৯৯৯-০০ মৌসুমে করেন ৩০ গোল। প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসের তৃতীয় খেলোয়াড় হলান্ড, যিনি তাঁর প্রথম মৌসুমে ৩০ বা এর বেশি গোল করলেন।

আর শুধু এ মৌসুম কেন, ছোট্ট ক্যারিয়ারের এখন পর্যন্ত তাঁর পরিসংখ্যান চোখ কপালে তোলার মত। যা ইঙ্গিত দেয়, হলান্ডের সামর্থ্য ভালোভাবেই আছে সেরাদের সঙ্গে টেক্কা দেবার। এমনকি মেসি-রোনালদোর সঙ্গেও! হলান্ড এখন পর্যন্ত ক্লাব প্রতিযোগিতার ২২০টি ম্যাচ খেলেছেন। ক্যারিয়ারের শুরুর ঠিক ওই পর্যায়ে, ক্লাবে ২২০ ম্যাচ শেষে কোথায় ছিলেন মেসি-রোনালদো? তাঁদের তুলনায় হলান্ড কোথায় দাঁড়িয়ে? 

ক্লাব প্রতিযোগিতার ২২০ ম্যাচে মেসি-রোনালদো-হলান্ড

নরওয়ের এই স্ট্রাইকার ক্লাবে ২২০ ম্যাচে করেছেন ১৭৯ গোল। প্রতি খেলায় গড় গোল দাঁড়ায় ০.৮১। মেসির ২২০তম সিনিয়র ক্লাব খেলাটি বার্সেলোনার হয়ে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে; অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে। ওই সময় পর্যন্ত তাঁর মোট গোল ছিল ১৪১টি। ম্যাচপ্রতি গড় গোল ০.৬৪। আর রোনালদোর ২২০ তম ক্লাব ম্যাচ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জার্সিতে; ২০০৭ সালে ওয়েস্ট হামের বিপক্ষে। সেই সময় রোনালদোর মোট গোল ছিল মাত্র ৫৫; ম্যাচপ্রতি গড় গোল মোটে ০.২৫। 

এই তো বলছে, ক্যারিয়ারের শুরুর অংশে অন্তত গোল করার দিক দিয়ে মেসি-রোনালদোকে ছাড়িয়ে গেছেন হলান্ড। ক্লাব ক্যারিয়ারে প্রথম ২২০ ম্যাচে মেসির চেয়ে ৩৮ এবং রোনালদোর চেয়ে ১২৪ গোল বেশি তাঁর।

পুরো ক্যারিয়ারের হিসাব করলেও গোলগড়ের জায়গায় নরওয়ের এই স্ট্রাইকার ছাপিয়ে গেছেন আর্জেন্টিনা ও পর্তুগালের দুই কিংবদিন্তকে। জাতীয় দল ও ক্লাবের হয়ে হলান্ড ২৪৩ ম্যাচে করেছেন ২০০ গোল। ম্যাচপ্রতি গড় গোল ০.৮২। সব মিলিয়ে ক্যারিয়ারে মেসি খেলেছেন ১০২০ ম্যাচ; করেছেন ৭৯৭ গোল। ম্যাচপ্রতি গড় গোল ০.৭৮। রোনালদো ১১৫৯ ম্যাচ খেলে করেছেন ৮৩৪ গোল। ম্যাচপ্রতি গড় গোল ০.৭২। 

গোলগড়ের হিসেবে হলান্ড ছাপিয়ে গেছেন মেসি ও রোনালদোকে

কী, হলান্ডই এগিয়ে না?

আবার দ্রুত ২০০ গোল করা খেলোয়াড়দের মধ্যে বয়সের দিক দিয়ে নেইমারের পর দ্বিতীয়তে হলান্ড। তিনি ২০০তম গোল করেছেন ২২ বছর ২৬১ দিনে। প্রথমে থাকা নেইমার করেছেন ২২ বছর ২৫৬ দিনে। এই তালিকায় চতুর্থ স্থানে মেসি। মেসি ২০০ গোল করেছেন ২৪ বছর ৫৪ দিনে। 

দেশের জার্সিতেও হলান্ডের রেকর্ড চোখধাঁধানো। নরওয়ের হয়ে ২৩ ম্যাচে ২১ গোল। তবে ব্যক্তিগত সাফল্য থাকলেও দেশের হয়ে দলীয় পারফরম্যান্সে পিছিয়ে হলান্ড। নরওয়েকে যেমন সর্বশেষ কাতার বিশ্বকাপেই নিয়ে যেতে পারেননি।

রোনালদো বা মেসি শুধু যে ব্যক্তিগত সাফল্য অর্জন করেছেন, তা নয়। ক্লাব ও দেশের হয়ে দলীয় সাফল্যও বড় ভূমিকা রেখেছে তাঁদের কিংবদন্তি মর্যাদায়। আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ, কোপা আমেরিকা জিতেছেন মেসি। বার্সেলোনার হয়েও অনেক অনেক সাফল্য। রোনালদোর সে সাফল্য রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো ক্লাবে। জাতীয় দলের জার্সিতে জিতেছেন ইউরো, নেশন্স লিগ। 

এখানটাতে হলান্ডের বহু পথ পাড়ি দেয়া বাকি।

ব্যক্তিগত সাফল্য থাকলেও দেশের হয়ে দলীয় পারফরম্যান্সে পিছিয়ে হলান্ড

গোলে, গড়ে হয়তো ক্যারিয়ারের শুরুর অংশে মেসি বা রোনালদোর চেয়ে এগিয়ে হলান্ড। তবে ক্যারিয়ারের শুরুতেই তো কেবল আছেন তিনি। ওই দুই কিংবদন্তির সঙ্গে তুলনার পর গার্দিওলা সেটাই মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, ‘আর্লিং জানে যে, ওই দুজনের আধিপত্য দুই দশক জুড়ে। এক বা দুই মৌসুমের জন্য। ওরা দীর্ঘ সময় ধরে গোল করেছে, শিরোপা জিতেছে, করেছে সম্ভাব্য সব কিছু।’ 

সেজন্যই তাঁরা মেসি-রোনালদো। ক্যারিয়ারের শুরুতে হলান্ড যতই প্রতিশ্রুতি দেখান, ওই দুজন থেকে এখনও হাজার মাইল দূরে হলান্ড। 

তবে অন্যসব একপাশে সরিয়ে রেখেও মেসি-রোনালদোর গোলের সঙ্গে তুলনা করার মতো একজনকে পাওয়া যাবে, সেটাও ভেবেছিলেন কে! তাও মাত্র ২২ বছরের একজন। মেসি-রোনালদোর সঙ্গে তুলনাটা বাড়াবাড়ি নিঃসন্দেহে। তবে এখন পর্যন্ত ক্যারিয়ারের যে কক্ষপথ, তাতে আর্লিং হলান্ডকে আপনার গোনায় ধরতেই হবে।

মন্তব্য করুন: